রবীন্দ্র সংগীতের বিকৃতি, হিরো আলমকে লিগ্যাল নোটিশ

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২২, ১৭:১১

হিরো আলম। ছবি: সংগৃহীত
বিকৃতভাবে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার করার অভিযোগে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।
পাশাপাশি এসব গানকে ‘গণ-উৎপাত’ আখ্যা দিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ঠিকানায় এ নোটিশ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্ত্বাধিকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
নোটিশে ভবিষ্যতে মিউজিক ভিডিও নির্মাণের নামে বিকৃত ও অশুদ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য পরিবেশন এবং অশালীন পোশাক পরিহিত দৃশ্য ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার ও প্রকাশ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার জন্য তাকে বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত ‘আমারও পরানো যাহা চায়’ গানটির একটি মিউজিক ভিডিও আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু দৃশ্যে তাকে গিটার হাতে গানটি গাইতে দেখা গেছে।
আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের গাওয়া গানের কিছু লাইন ও শব্দের সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত ‘আমারো পরানো যাহা চায়’ মূল গানটির লাইন ও শব্দের মিল পাওয়া যায়নি।
এছাড়া একইভাবে বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া ‘আমি শুনেছি সেদিন তুমি’ গানটিও আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম গেয়েছেন, যার কিছু লাইন ও শব্দের সঙ্গে মূল গানটির লাইন ও শব্দের মিল নাই।
ইতোপূর্বেও আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম উগান্ডার সোয়াহিলি ভাষার ‘মোগোয়া জাগোম্বে’ নামে একটি লোকগান করেছেন। সেখানেও মূল গানের সঙ্গে নিজের ইচ্ছামতো নতুন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এছাড়া আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের গাওয়া গানগুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কমেন্ট বক্স ভরে গেছে নানারকম নেতিবাচক মন্তব্যে। অধিকাংশ ব্যক্তিই তার নামে বিকৃতভাবে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
একজন লিখেছেন, ‘এক সময় এই গানটি আমার প্রিয় ছিল। রবীন্দ্রনাথ থাকলে এক গ্লাস পানিতে ডুইবা মরতো।’ আরেকজন লিখেছেন, 'গান শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছিলাম কিন্তু কমেন্ট পড়ে জ্ঞান ফিরে পেলাম। যাক হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। গানটার অকাল মৃত্যু হয়ে গেল খুবই কষ্ট লাগছে।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান এপার ওপার বাংলার অসংখ্য মানুষের আবেগের জায়গা। সেই আবেগের প্রতি আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম খুব একটা যত্নশীল হননি বা সুবিচার করতে পারেননি। বরং তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে সরাসরি গানের কথা ও সুরের বিকৃতি ঘটিয়ে চলেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, গান গাইবার অধিকার সবার আছে, কিন্তু কোনো গান বিকৃতি করার অধিকার কারো নেই। এমন কি গানের বাণিজ্যিক রিমেক বা ব্যবহার করতে গেলেও মূল গায়ক/গায়িকার বা গানের স্বত্ত্বাধিকারীর অনুমতি নেয়াটাও জরুরি।
আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম মিউজিক ভিডিও নির্মাণের নামে বিকৃত ও অশুদ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও দৃশ্য ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার ও প্রকাশ করে গণ-উৎপাত সৃষ্টি করে অপরাধ করেছেন।
উৎপাত শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে উপদ্রব, দৌরাত্ম্য, অত্যাচার। এটি এমন এক ধরনের অপরাধমূলক কাজ, যা জনগণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। আরও সহজ করে বলতে গেলে অন্যের ভোগে বা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাঘাত ঘটানোর নামই উৎপাত।
এটি দেওয়ানী ও ফৌজদারী অপরাধ। গণ-উৎপাত সম্পর্কে ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ২৬৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কর্তৃক জনসম্মুখে এমন কোনো কাজ করা, যার দ্বারা জনগণের বিরক্তি সৃষ্টি হয় এমন কার্য করাকে গণ উৎপাত বলে’।
এছাড়া দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করিয়া (ক) কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কার্য করে অথবা (খ) কোন প্রকাশ্য স্থানে বা সন্নিকটে কোন অশ্লীল গান, গাঁথা সংগীত বা পদাবলী গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে; সেই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনায় কারাদন্ডে যাহার মেয়াদ ৩ মাস পর্যন্ত হইতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
লিগ্যাল নোটিশে আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার আরও বলেছেন, আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম একজন চলচ্চিত্র শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি বিধায় অনেকেই তার ভাষাগত উচ্চারণ, আচার আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, নাচ, পোশাক, চলাফেরা অনুকরণ ও অনুসরণ করে থাকে।
ফলে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের নির্মাণকৃত মিউজিক ভিডিওতে বিকৃত ও অশুদ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য পরিবেশন ও অশালীন পোশাক পরিধানজনিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা, তরুণ-তরুণীরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। যা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করবে।