
আবুল হায়াত। ফাইল ছবি
বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত। একাধারে মঞ্চ, টিভি নাটক ও সিনেমা- তিন মাধ্যমেই অভিনয়ে সুনাম অর্জন করেন। বর্তমানে টেলিভিশনেই বেশি কাজ করছেন বলে জানান। শুধু অভিনয়েই নয়, পরিচালনাতেও তিনি দারুণ সমাদৃত। এদিকে জুলাই মাসে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন।
১৯৭২ সালে ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান এ অভিনেতা। বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন-সফলতা ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এন ইসলাম।
কেমন আছেন? অভিনয়ে ব্যস্ততা কেমন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এখনো সুস্থভাবে কাজ করতে পারছি এটাই অনেক বড় বিষয়। তবে এখন আর আগের মতো অনেক কাজ করা হয় না। বিশেষ করে করোনার সময় থেকে কাজ অনেক কমিয়ে দিয়েছি। যে কাজগুলো মনের মতো হয় সেগুলোই করছি।
এ সময়ে এসে কোন বিষয়টির অভাব বেশি চোখে পড়ে?
আসলে সময়ের সঙ্গে আমাদের অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। সবাই সহজে সব পেতে চাই। যার কারণে অনেক ভালো জিনিসও ভালো হচ্ছে না। আগে যে কোনো সিনেমা বা নাটকের কাজের পূর্বে নির্মাতা-শিল্পীদের মধ্যে একটা সমন্বয় হতো। স্ক্রিপ্ট বা চরিত্র নিয়ে আলেচানা হতো। এখন সেসব আর নেই। আজকাল অনেক সময় শুটিং স্পটে গেলে নাটকের স্ক্রিপ্ট পাই।
আপনার দীর্ঘ সময়ে অনেক শিল্পীর উথান-পতন দেখেছেন। এই উথান-পতনের গল্পটা শুনতে চাই...
নাটক-সিনেমায় অনেকে আসেন। কিন্তু সবাই টিকে থাকেন না। অনেক ভালো শিল্পীও হারিয়ে গেছেন। প্রত্যেক মানুষ তার যোগ্যতায় টিকে থাকেন এটা মনে রাখতে হবে। যাদের মধ্যে কমিটমেন্টের অভাব থাকে তারা হারিয়ে যাওয়ার দলেই পড়ে যায়। আমি মনে করি শিল্পীদের প্রফেশনাল অ্যাটিচিউড ঠিক রাখতে হবে। এখানে সব কিছু নিজের মতো ভাবলে চলবে না। দীর্ঘদিন জার্নি করার জন্য এগুলোর বিকল্প নেই।
সম্প্রতি চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন?
অনেকেই জানে না আমি ৫০ বছর ধরে সিনেমায় অভিনয় করছি। অবশ্য আমিও সবার মতো অনেক বেশি সিনেমায় কাজ করিনি বলেই হয়তো এমনটা হয়েছে। তবে ৫০ বছরে যে সিনেমাগুলোতে কাজ করেছি তার বেশিরভাগ দর্শক গ্রহণ করেছেন এটাই আমার সার্থকতা। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘বধূ বিদায়’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ও ‘আদরের সন্তান’সহ অনেকগুলো কালজয়ী সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
সে সময়ে আমি মঞ্চে কাজ করতাম। তবে সিনেমার দিকেও আগ্রহ ছিল। কিন্তু কোনো সুযোগ পাইনি। এর মধ্যে একদিন হাসান ইমাম ভাই সিনেমায় কাজ করার কথা জানান। তার মধ্যে ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা। এটি শোনার পর নিজের মধ্যে সিনেমার প্রতি আরও বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি একদিন আমাকে এফডিসিতে ঋত্বিকবাবুর কাছে নিয়ে যান। তখন তিনি আমাকে দেখে বললেন তোমারে জমিদারের মতো লাগতেছে। স্মৃতিটা আজও ভুলিনি। তার হাত ধরেই সিনেমাতে আসি। এটিই আমার প্রথম সিনেমা।
এ সিনেমার প্রথম দিনের শুটিং কেমন ছিল?
আমার প্রথম দিনের শুটিং ছিল আরিচাতে। তবে আমাকে প্রথম শুটিংয়ের জন্য যেদিন ডাকা হয় সেদিন শুটিং করতে পারিনি। এভাবে বেশ কয়েক দিন আমাকে ফিরে যেতে হয়েছে। একটা সময় মনে হলো আমার হয়তো আর কাজ করা হবে না। বেশ কয়েক দিন অপেক্ষার পর আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি।
ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে আপনার স্মরণীয় কোনো ঘটনার কথা বলুন।
‘নিজের ঢোল নিজেকে পিটাতে হয়। অন্যকে দিলে ফাটাইয়া ফেলবে।’ দাদার সেই কথাটি আমার এখনো দারুণভাবে মনে গেঁথে আছে। এ কথা বলার একটা কারণ ছিল। সেই সময়ে দাদাকে আমি আমার একটা মঞ্চ নাটক দেখতে বলেছি। কিন্তু তিনি সময় নেই বলে আর দেখেননি। এর কয়েক দিন পর পত্রিকায় আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা লেখা হয়। তিনি সেটি দেখে বললেন কেন আমি আগে বলিনি এত ভালো অভিনয় করতে পারি।