সমালোচনা হতে পারে কাজের, ব্যক্তির নয় : এলিনা শাম্মী

মোহাম্মদ তারেক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১১:০১

এলিনা শাম্মী। ছবি: সংগৃহীত
এলিনা শাম্মী
একাধারে অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা ও
নাট্যকার। উপস্থাপনা এখন কম করলেও তার ক্যারিয়ার শুরু সঞ্চালনায়। বর্তমানে অভিনয়েই
তার অধিকাংশ সময় কাটছে। তার পাশাপাশি চলছে নাটকের চিত্রনাট্য লেখার কাজ। নিজের
ব্যস্ততা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেক
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
এখন একটি ওয়েব সিরিজের শুটিং করছি। সহশিল্পী হিসেবে আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, মনোজ প্রামাণিক। সিরিজটি পরিচালনা করছেন ইফফাত জাহান মম। নাম ঠিক করা হয়েছে ‘মুনতাসীর’। দেশের একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য সিরিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করেছি। এ ছাড়া আরটিভির ধারাবাহিক নাটক ‘ঝড়ের পাখি’তে অভিনয় করছি। আর সিনেমার কথা বললে, সামনে তানভীর হাসান পরিচালিত ‘মধ্যবিত্ত’র শুটিং আছে। মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’র ডাবিং শেষ করেছি। ছবিটি শিগগির মুক্তি পাবে। এর বাইরে অপূর্ব রানার ‘জলরঙ’-এর ডাবিং আছে এ মাসের শেষে।

সর্বশেষ শিহাব শাহীনের ‘সিন্ডিকেট’ ওয়েব সিরিজে আপনাকে দেখা গিয়েছিল। চরিত্রের ব্যাপ্তি কম হলেও আপনার অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শকের। এ বিষয়ে কী বলবেন?
‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকের বিভিন্ন মতামত চোখে পড়েছে। অনেকেই বলেছেন আমার উপস্থিতি আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো। যতটুকু সময় পর্দায় ছিলাম, তার চেয়েও বেশি প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। দর্শক আমার অভিনয় পছন্দ করেছে। আমাকে নিয়ে লিখেছে। এসব দেখে ভালো লেগেছে।

এ সময়ে দর্শক সিনেমাহলে ফিরছে। আবার তারকাদের নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
দেখুন অল্প সময়ে বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একটির রেশ না কাটতেই সিনেমাহলে নতুন সিনেমা চলে এসেছে। এত সিনেমা রিলিজ হচ্ছে যে, দর্শক সময় করে উঠতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে মুক্তির তারিখ নির্বাচন করা উচিত ছিল। তাহলে দর্শক প্রতিটি সিনেমাই দেখত। কারণ আমরা বিনোদন চাই। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর প্রতিটিই ভালো।
সঠিক প্রচার ও সমন্বয় সিনেমাকে ফ্লপ বানানোর উল্লেখযোগ্য কারণ। অন্যদিকে বিনোদন জগতের মানুষদের নিয়ে সমালোচনা হবেই। যে যত বড় তারকা তার দুর্নাম তত বেশি। যাকে মানুষ চেনে না তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। আমাদের উচিত একজন তারকার কাজ দেখা, যার মাধ্যমে তারা তারকা হয়। ব্যক্তি জীবন নিয়ে চর্চা করলে তার কাজে প্রভাব পড়ে। তাই সমালোচনা হতে পারে কাজের, ব্যক্তির নয়।

বাণিজ্যিক ছবি
নিয়ে আপনার কী ভাবনা?
আমি যে কোনো
ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে রাজি। তবে শর্ত একটাই। ছবিতে অভিনয়ের জায়গা থাকতে হবে। যদি
অভিনয় করা যায়, তাহলে বাণিজ্যিক
ছবিতে কাজ করতে আপত্তি নেই।
উপস্থাপনায়
নিয়মিত ছিলেন একসময়। এখন আপনাকে উপস্থাপনায় দেখা যায় না বললেই চলে...
আসলে উপস্থাপনা
করতে গেলে প্রচুর সময় দিতে হয়। কিন্তু অভিনয়ের জন্যও তো প্রস্তুতি প্রয়োজন।
পড়াশোনা করতে হয়, সিনেমা দেখতে হয়।
উপস্থাপনা করলে এদিকে সময় দিতে পারব না। তাছাড়া আমার লেখালেখি করতে হয়। তাই
উপস্থাপনা করা হচ্ছে না। তবে ভালো কোনো কাজের প্রস্তাব এলে অবশ্যই বিবেচনা করব।
আপনি একজন
চিত্রনাট্যকারও বটে। লেখালেখি কেমন চলছে?
এ সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নাটক লিখতে গেলে নিজের সৃজনশীলতার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে হবে। মাত্র তিন বা চারটি চরিত্র নিয়ে একটি নাটক লেখা সম্ভব নয়। আমি নাটক লিখে জীবিকা নির্বাহ করি না বলে ব্যাপারটি মেনে চলছি। অনেকের পক্ষে নিজের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ না করে কাজ করা সম্ভব হয় না। দেশের সমাজ-সংস্কৃতি তুলে ধরতে গেলে কয়েক শ্রেণির চরিত্র প্রয়োজন। বাজেটের অজুহাতে ইদানীং চরিত্র কমিয়ে ফেলা হচ্ছে।

এভাবে গল্প বললে দর্শক জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পায় না। তাই নিজের মানে ছাড় দিয়ে নাটক লিখতে ইচ্ছুক নই। এর মধ্যেও লেখালেখি চলছে। একটি কথা বলা প্রয়োজন, ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এ সমস্যা নেই। ওখানে যে গল্প ইচ্ছা বলা যাচ্ছে। দর্শক তাই ওয়েব ফিকশন দেখে আনন্দ পাচ্ছে। নাটক পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ প্রয়োজনীয় চরিত্র ছেঁটে ফেলার প্রবণতা। একটি কথা যোগ করতে চাই, সেটি হলো যে জায়গায় সেন্সরশিপ নেই সেখানে অশ্লীলতাকে প্রমোট করা হচ্ছে। অথচ চাইলে শালীনভাবে জীবনের গল্প বলা যায়। যতটুকু না দেখালেই না ততটুকু দেখিয়ে অশ্লীলতা এড়িয়ে নাটক বা ওয়েব ফিকশন বানানো যায়। এরকম অশ্লীলতা শিল্পের ক্ষত।

টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের প্রচার সম্পাদক হিসেবে আছেন। আপনাদের কার্যক্রম কেমন চলছে?
আমাদের সংগঠনের
কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
প্রায় ১৭০ জন মূল সদস্য আছেন। ৫০ জনের মতো আছেন প্রাথমিক সদস্য। এখানে ভোটাভুটি
নেই। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয়। সিদ্ধান্তগুলোতেও সবার সম্মতি থাকে।
সিনিয়রদের প্রতি সবার আস্থা আছে। আমরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই কোনো
অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি হয় না বললেই চলে। আমাদের সংগঠন শুরুতে দুর্বল থাকলেও
অন্যান্য সক্রিয় সংগঠনের সমমানের। আমি মূল পেশার বাইরে যেটুকু পারছি সংগঠনে সময়
দিচ্ছি।