
বর্তমানে নাটক ও সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের গল্প খুব বেশি থাকছে না। ছবি: সংগৃহীত
বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। এ সময়ে বদলে গেছে স্বাধীন বাংলার অনেক চিত্রপট। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে নানাভাবে আমাদের এ মুক্তিযুদ্ধ উঠে এসেছে দেশীয় নাটক-সিনেমায়।
১৯৭১ সালে জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রামাণ্যচিত্রই প্রথম। দেশ স্বাধীনের পর বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর মধ্যে মাসুদ পারভেজের প্রযোজনায় চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২) সিনেমাটি সে সময় দারুণ সাড়া ফেলে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের এমন সিনেমা আর দেখা যায়নি।
এক সাক্ষাৎকারে সিনেমাটির প্রযোজক মাসুদ পারভেজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা করার জন্য যে ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হয় সেগুলো এখন জোগাড় করা সম্ভব নয়। আমি যখন সিনেমাটি নির্মাণ করি তখন যুদ্ধের অনেক কিছুই বিদ্যমান ছিল। এখন আর সে সব নেই। সব কিছু তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বিশাল বাজেট ও সরকারের সহযোগিতা। বাজেট সংকট ও নানা সমস্যার কারণেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সিনেমার মতো বর্তমানে টিভি নাটকেও মুক্তিযুদ্ধের গল্প খুব বেশি থাকছে না। সারা বছরই প্রতিটি টেলিভিশনের জন্য নির্মাণ হয় নতুন নতুন নাটক। গেল কয়েক বছরে শুধু ঈদ উৎসবেই সপ্তাহব্যাপী টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার হয় ৫ শতাধিক নাটক। প্রশ্ন ওঠে, এসব নাটকের কয়টিতে থাকছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বিটিভির বাইরে ৩০টির মতো দেশি টিভি চ্যানেল আছে। এসব চ্যানেলে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রচার হয় না। অনেক নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধের গল্পের নাটক নির্মাণ করলেও টিভি চ্যানেলগুলো সেই নাটকগুলো নিচ্ছে না। যার ফলে নির্মাতারাও মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণে খুব বেশি এগিয়ে আসতে চায় না।
অথচ স্বাধীনতার পর বিটিভিতে প্রচার হওয়া প্রথম নাটকটিই ছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। নাটকের নাম ‘বাংলা আমার বাংলা’।
ড. ইনামুল হকের লেখা নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। একটি দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে টিভি নাটক ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সেখানে নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে এখন নির্মাণ হচ্ছে নাটকগুলো। প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো বিষয় খুব একটা থাকে না এসব নাটকে।
এই প্রসঙ্গে অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এসে ৭১কে টিভি পর্দায় তুলে ধরার জন্য যে বাজেট প্রয়োজন সেটি আমাদের নেই। কারণ সেই সময়ের চিত্র দৃশ্যধারণ করার জন্য অনেক কিছু সংগ্রহ করতে হয়। তবে আমরা শিল্পীরা বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের গল্পে কাজ করতে চাই। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণ করার জন্য চ্যানেলগুলোর ভূমিকা বেশি রাখতে হবে। শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা না করে দেশের প্রতি প্রেম ও দায়বদ্ধতা থেকেও তারা মুক্তিযুদ্ধের নাটক নির্মাণ করার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।’