সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতেও দীর্ঘ সময় ধরে নানা রকম অনিয়ম চর্চা হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সেসব অপকর্মের খবরও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশে এবার যে পরিবর্তন এসেছে তার সঙ্গে শিল্পীরাও সংস্কৃতি অঙ্গনগুলোতে সংস্কারের দাবি তুলেছেন।
গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা মাধ্যমে অযোগ্য ও দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে অনেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। যোগ্য ব্যক্তিদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন তারা। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বিটিভি-বেতার ও শিল্পকলা এবং চলচ্চিত্রে দলকে ব্যবহার করে কেউ কেউ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। এসব থেকে এবার মুক্তি চান সংস্কৃতি কর্মীরাও। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে এসবের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।
তাদের ভাষ্য, ‘সময়টা শুধু উদযাপনের নয়; সময়টা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের। এই নতুন বাংলাদেশ সব জাতির, সব বর্ণের, সব ধর্মের, সব লিঙ্গের একটি বৈষম্যহীন জনপদ হয়ে উঠবে।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মতো একজন শিল্পীরও মতাদর্শ থাকতে পারে। ভিন্ন মত ও দলের হলে তার সত্তাকে থামিয়ে দিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু গত কয়েক বছর আমরা তার ব্যতিক্রম দেখতে পাচ্ছি। রেডিও-টেলিভিশনে অনেক শিল্পীকে কালো তালিকাভুক্ত করে বছরের পর বছর তাদের কোনো গান করার সুযোগ দেয়নি। আমি এসবের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। আমি আশা করব আগামীতে আমাদের এসব আর দেখতে হবে না।’
এক যুগের বেশি সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে কালো তালিকায় ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী মনির খান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরে বিটিভি, রেডিও ও শিল্পকলায় গান গাওয়ার সুযোগ পাইনি। আরও কষ্টের বিষয় হলো, যাদের সঙ্গে গান করেছি, সংগীত পরিবারের অনেকেও আমাদের মধ্যে দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন। যেন সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে যেতে না পারি। এমন অসভ্যপনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আশা করা যায় না। মানুষ হিসেবে সবার মতো একজন শিল্পীরও আদর্শ থাকতে পারে। তাই বলে তাকে কালো তালিকায় রাখতে হবে এটি কখনো কাম্য না।’
পরিবর্তন চান চলচ্চিত্র কর্মীরাও। বছরের পর বছর এফডিসিতে অযোগ্য ও দলীয় লোকজনের প্রভাবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও অনেকটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে অনেকে জানান। এদিকে থিয়েটার কর্মীদের দাবি, দলীয় বিবেচনায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ পূরণ করা চলবে না। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নতুন পরিচালক নিয়োগ করতে হবে এবং থিয়েটার সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে যে কোনো সংগঠন বা প্ল্যাটফর্মে তরুণ কর্মী ও অ্যাকটিভ থিয়েটারগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। গেল কয়েক বছর শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দেখা গেছে দলীয় লোকদের। এসবের পরিত্রাণ চান থিয়েটার কর্মীরা।
টিভি নাটকের অভিনেত্রী চমক বলেন, ‘এখন দ্রুত আমাদের শিল্পীদের একটি কমিটি গঠন করা উচিত। যেটি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন রক্ষার কাজে দেবে। যারা মূলধারার শিল্পী, যারা রাজনৈতিক কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু শিল্পীদের কথা ভাবে, তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা উচিত।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh