Logo
×

Follow Us

উদ্যোক্তা

শখের বশে মেহেদি ডিজাইনার শাহরিয়ার

Icon

মেহনাজ খান

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৫৭

শখের বশে মেহেদি ডিজাইনার শাহরিয়ার

মেহেদি আর্টি

হাতে মেহেদি দেয়া যে পেশা হতে পারে, তা নারীরা নয় জানেন পুরুষরাও। সেটা প্রমাণ করেছেন উদ্যোক্তা শাহরিয়ার। বিশেষ দিনে মেহেদি আর্টিস্টের কাছে মেহেদি দেয়ার জন্য আগে থেকে বুকিং দিতেও দেখা যায়। তবে একজন ছেলের হাতে মেহেদি দিতে লম্বা লাইন? এমনও আছে। শাহরিয়ার আলমের ক্ষেত্রে তেমনটাই দেখা যায়। শাহরিয়ার এখন পেশাদার মেহেদিশিল্পী।

২০০৮ সালে শখের বশে ঈদের সময় মেহেদি নকশার কাজ শুরু করেন শাহরিয়ার। তবে মেহেদি দেয়া যে পেশা হিসেবে নেয়া যায়, সেটা তিনি জানতেন না। এখন ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেও এ পেশায় নেমেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার  ‘শাহরিয়ার্স মেহেন্দি’ নামে পেজ আছে যার প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি ফলোয়ার্স।

শাহরিয়ার বলেন, ‘যদিও শুরুর যাত্রাটি সহজ ছিলো না। ছেলে হিসেবে এই পেশায় কাজ করা অনেক কঠিন ছিলো। তবে ২০১৯ সাল ছিলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। প্রথম দিকে বেশিরভাগ কাজই বাতিল হয়ে যেত। ছেলে বলে এ সেক্টরে অনেক সময় কাজ পাইনি। অনেকে মনে করতেন যেহেতু মেহেদির কাজ, তাই মেয়েই হবে। কল করার পর বিব্রত হতে হতো। আবার অনেক সময় তার আত্মীয় ও বরপক্ষ নানা কথা বলত ও হাসাহাসি বা অনাকাঙ্ক্ষিত কথাও শুনেছি।


সংস্কৃতিমনা পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। পরিবারের অনেক সদস্যই গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। যেহেতু আগের থেকে শিল্পী ছিলেন তাই এ নকশার কাজও ভালো লাগত তার। বড় বোন ভালো মেহেদির নকশা করতেন, যা দেখেই মূলত ইচ্ছা তৈরি হয়েছিল। প্রথম দিকে শুধু ঈদের সময়ে শখে মেহেদির নকশা আঁকতেন শাহরিয়ার। ২০১৩ সালের দিকে একজন আপুর মাধ্যমে নড়াইলে বাড়ির কাছে তার পারলারে প্রথম কাজ করার সুযোগ পান। এরপর ২০১৬ সালে একটি মেহেদি দেয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পর শাহরিয়ারের স্বপ্ন আরো বড় হয়। এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে মোট ১৫ জন মেহেদিশিল্পী নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাত্র একজনই ছিলেন ছেলে। বাকি ১৪ জন মেয়েদের সাথে প্রতিযোগিতা করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন উদ্যোক্তা শাহরিয়ার।


ঢাকা আসার পর দিনগুলো বেশ কঠিন ছিলো। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি হতে চেয়েছিলেন মেহেদি নকশার শিল্পী। কিন্তু এই পেশার কারও সাথেই তার পরিচয় ছিলো না। এভাবে অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সাল বানথাই বার্বার পারলার থেকে ডাক পান তিনি। এটাই ছিলো বড় তার প্রথম পরিসরে কাজের শুরু। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই মেহেদি ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের পেজে কীভাবে কাজ করেছেন তা জিজ্ঞেস করলে শাহরিয়ার সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, তার এ বিষয় কোন ধারনা ছিলো না। শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। তাই কাজ শিখতে অনেক মেহেদি ডিজাইনারের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না। অনেক চেষ্টার পর শেষে একজন মেয়ে মেহেদি ডিজাইনার পেয়েছিলো। ওই ডিজাইনার তার কাজ পছন্দ করলো। এর পর ওই মেয়েটার সাথে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে পুরো ১ বছর কাজ করেন। আর তত দিনে পেজ চালানোর কাজটাও শিখে ফেলেন তিনি।


তবে কঠিন পথের শেষ ছিলো না শাহরিয়ারের, ২০১৯ সালে একা কাজ করতে গিয়ে দেখলেন ছেলেদের গ্রহণযোগ্যতা এই পেশায় কম। তাই ২০২০ সালে এসব বিষয় নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। এতে অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ছেলে মেহেদিশিল্পী হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে। করোনাকালেও এই পেশা থেকে সরে যাননি শাহরিয়ার আলম। অনলাইনে ১ বছরে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে মেহেদি পরানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫