স্বপ্ন দেখা মাহবুবা এখন কর্ম সৃষ্টির উদ্যোক্তা

মেহনাজ খান
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:২১

উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা
উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখনো তাদের স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখা মেয়ে হয়ে গেলেন কর্ম সৃষ্টির উদ্যোক্তা। ছোটবেলার কাজগুলোই তাকে উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহী করে তুলেছে।
উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা জানান, লেখা-পড়া করতে ভালো লাগতো না। সব সময় স্বাধীন কিছু করতে ভালো লাগতো। সাত বছর বয়স থেকে দুপুরের খাওয়া শেষে যে সময় মা-বাবা ঘুমাতে যায়, সেই সময়ে ছোট ছোট চেন, পুথি, চুমকি নিয়ে পুতুলের শাড়িতে কাজ করতেন। তখন ছোট ছিলেন তাই বুঝতেন না। এখন মনে হয় উদ্যোক্তা হওয়ার বীজ যেন সাত বছর থেকেই শুরু।
এসএসসির পরে একটা ম্যাগাজিনে গ্রাফিক ডিজাইনের আর্টিকেল পড়ে তখন থেকেই ইচ্ছাটা মনের মধ্যে এসেছিল। কিন্তু বাসায় বলার সাহস হয়নি তার। এক দিন কলেজ শেষ করে বাবা-মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ইন্টেরিয়রে ডিপ্লোমাতে ভর্তি হলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
পড়াশোনা শেষ করে কয়েক বছর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করেন। বিয়ের পরে স্বামীর উৎসাহে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাফিক ডিজাইন এন্ড মাল্টিমিডিয়াতে গ্রাজুয়েশন করেন। ২০১৮ থেকে নাগরিক টেলিভিশনে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন এই উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা ব্যবসা নিয়ে বলেন, ছয় বছর থেকেই চুমকি, পুথি নিয়ে খেলতাম। তাই ক্রিয়েটিভ সাইটে যাওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিল আমি নিজে কিছু একটা করবো। কিন্তু সংসার, পরিবার, চাকরি সব মিলিয়ে কিছুই মিলছিল না। তারপর শুরু হলো করোনার লকডাউন। প্রায় কয়েক মাস বেকার। ওই সময়টাতে মনে হলো কিভাবে প্যানডেমিক সময় কাজে লাগানো যায়। যেহেতু লেখা-পড়া ক্রিয়েটিভ সাইটে, তাই মনে হল সৃজনশীল কিছু করার।
কিন্তু কি করবেন? সেটাই ছিলো ভাবনার বিষয়। ঠিক করলেন নবজাতক শিশুদের কাপড় নিয়ে কাজ করবেন। ভয় পাচ্ছিলেন ঠিক করছেন, না ভুল করছেন। এর মধ্যে কিছু মানুষ বলা শুরু করলো এইসব স্লো প্রডাক্ট, অনেক অনলাইন পেজেই আছে, এসব করে লাভ নাই। তখন আরো জেদ চেপে গেল। বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। একটা অনলাইন পেইজ খুললেন। নিজের কাছে জমানো ৮০ হাজার টাকা ছিল, সেটা দিয়েই শুরু করে দিলেন। এরপর থেকে এভাবে চলে যাচ্ছে উদ্যোক্তার ব্যবসায়ী জীবন।
উদ্যোক্তার পেজের নাম দিয়েছেন ‘নিরুপম’। নিজের ডিজাইন করা নবজাতক শিশুদের জামা, নকশি কাঁথা, নেপি, কুশন কভার, বেড কভার তৈরি করে আপাতত ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন।
ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে, নিজেই ডিজাইন তৈরি করেন। এখন খুব ছোট পরিসরে কয়েকজন কর্মী নিয়ে ঢাকার বাইরে একটা ফ্যাক্টরিতে চুক্তিতে কাজ করানো হয়। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে বলে জানান উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা।