
- সানজিদা লোপা
সানজিদা লোপা মেধাবী ও পরিশ্রমী একজন নারী উদ্যোক্তা। তার পণ্যের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে সেগুলো বলে দেশের নানা ঐতিহ্যের কথা।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার সুড়িকানদী গ্রামে বেড়ে ওঠা লোপার লেখাপড়া সিরাজগঞ্জের চৌহালি কলেজে।
উদ্যোক্তা হিসেবে তার পথচলা শুরু ২০০৮ সালে। তার প্রতিষ্ঠান তৈমুর বুটিকস অ্যান্ড টেইলার্সের পণ্যে পাওয়া যায় নানান দেশীয় ঐতিহ্যের ছাপ। পণ্যের সঠিক মান বজায় রাখতে সবসময় খুঁতখুঁতে লোপা।
‘শুরুর সময়টা অতোটা সহজ ছিল না।’ নিজের যাত্রা এভাবেই সহজ সরলভাবে ব্যক্ত করেন লোপা। তিনি জানান, ‘ঘরোয়াভাবে কাজ শেখার পর নিজের ব্যবসা শুরু করি। এক বান্ধবীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার করে ব্যবসার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে কাজে নেমে যাই। ওই বান্ধবীই ১৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করেছিলেন তখন। এর কিছুদিন পর পাশের বাড়ির এক নারী এসএমই ফাউন্ডেশনে স্টল নেন। তিনি অনেকগুলো স্টল নেয়ায় পণ্যের স্বল্পতায় পড়ে গেলে তখন ওই নারীকেও সানন্দে কিছু পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করি।’
ওই মেলায় বেশ কিছু পণ্য সরবরাহ করেন লোপা। তার পণ্য বিক্রিও হয়েছিল অনেক। এরপরই হঠাৎ বুঝতে পারেন টের পান মেলায় যারা তার পণ্য কিনেছিলেন তারা ও অন্যরা ওই সব পণ্যের জন্য পাশের বাড়ির ওই নারীকেই খুঁজছেন। কিন্তু লোপাকে কেউ খুঁজছেন না। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন মনোকষ্টে ভোগেন লোপা। তারপর থেকে নিজের পথচলা শক্তভাবে শুরু করেন তিনি। পাঁচ হাজার টাকার স্বল্প পুঁজির ওপর ভর করে আজ তিনি উদ্যোক্তা।
লোপা বলেন, ওই মেলার পর নিজের পরিচিতি তৈরির লক্ষ্যে ‘তৈমুর বুটিকস এন্ড টেইলার্স’ নামে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান চালু করেন। খুব বেশি চিন্তাভাবনা করে এটি করেননি। তিনি বলেন, খুব বেশি টাকা পুঁজি না হলেও যা দিয়ে শুরু করেছিলেন তাও নিজের যোগ্যতায় বলে খুশি তিনি। ওই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন বলে নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করেন লোপা।
লোপা পণ্য সম্পর্কে বলেন, মূলত টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি। জামদানি শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট শাড়ি, ব্লক প্রিন্টের থ্রি পিস, জামদানি থ্রিপিস, টাঙাইলের শাড়ী, কুশন কাভার, বেডশিট, বিভিন্ন ধরনের তাঁতের টাঙ্গাইলের বস্ত্র নিয়ে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছেন। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ২৫ জন কর্মী কাজ করছেন। এছাড়াও একটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী তিনি। পার্লারের নাম দিয়েছে প্রিন্সেস বিউটি পার্লার।
উদ্যোক্তা সানজিদা লোপা তৈমুর বুটিকসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘আমি যেসব পণ্য সম্পর্কে বেশি জানি সেসব পণ্য নিয়েই আমি কাজ করার কথা ভাবি সবসময়। তাই দেশীয় পণ্য নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার সুবাদে অনেক আঞ্চলিক পণ্যের সাথে পরিচিত ছিলাম। আমার মায়ের শাড়ির প্রতি ছিল অন্যরকম ভালবাসা। তার জন্য অনেক শাড়ি চিনতে পেরেছি। টাঙ্গাইলের তাঁতের অথবা জামদানির সঙ্গে আমার অন্যরকম একটি মায়ার অনুভূতি কাজ করে।’
সানজিদা লোপা আরো বলেন, নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি দুস্থদের সহায়তা করা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। নতুনদের উদ্দেশ্যে তার বার্তা, ‘অবশ্যই সততার সাথে ব্যবসা করবে। পরিশ্রম করলে জীবনে সফলতা আসবেই।’