গাছটির নাম নীলমণি আগে ছিল না। রবীন্দ্রনাথ পেট্রিয়া নামের এই ভিনদেশি সুদর্শনাকে নীলমণি নাম দিয়ে আপন করে নিয়েছেন। নামটি একেবারে যথার্থ। নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন- ‘শান্তিনিকেতন উত্তরায়ণের একটি কোণের বাড়িতে আমার বাসা ছিল। এই বাসার অঙ্গনে আমার পরলোকগত বন্ধু পিয়র্সন একটি বিদেশি গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। অনেককাল অপেক্ষার পরে নীলফুলের স্তবকে একদিন সে আপনার অজস্র পরিচয় অবারিত করল। নীল রঙে আমার গভীর আনন্দ, তাই এই ফুলের রাণী আমার যাতায়াতের পথে প্রতিদিন আমাকে ডাক দিয়ে বারে বারে স্তব্ধ করেছে। আমার দিক থেকে কবিরও কিছু বলার ইচ্ছে হতো; কিন্তু নাম না পেলে সম্ভাষণ করা চলে না। তাই লতাটির নাম দিয়েছি নীলমণি লতা।’

বনবাণী কাব্যে তিনি লিখেছেন-
‘নীলিমাবন্যায় শূন্যে উচ্ছলে অনন্তব্যাকুলতা
তারই ধারা পুষ্পপাত্রে ভরি নিল নীলমণি লতা।’

নীলমণি বসন্তের নীল প্রজাপতি যেন। দূর থেকে মনে হয় নীল মেঘের একটা টুকরো হঠাৎ গাছে আটকে গিয়ে রঙের বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলের এ গাছ বেশ শক্ত লতা ধরনের। পাতাগুলো খুব বড় এবং খসখসে। বসন্তকালে অল্প সময়ের জন্য ফুল ফোটে; তখন মৌমাছিরা আসে দলে দলে। ফুলের পাপড়িগুলো দুই স্তরে সুসজ্জিত। বাসি ফুল রঙ বদলে প্রথমে বেগুনি পরে প্রায় সাদা রঙ ধারণ করে। রমনা পার্ক, শিশু একাডেমি, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে নীলমণি দেখা যায়।

নীলমণি (Petrea volubilis) কাষ্ঠ লতার বড় ঝাড়, অনেক ওপরে উঠতে পারে। পাতা একক, রুক্ষ, ৮ থেকে ১৬ সেমি এবং অখ-। বসন্তে প্রায় নিষ্পত্র পাতা নীল ফুলের স্তবকে ভরে ওঠে, তখন অপূর্ব তার রূপ। ৫টি লতির বৃত্তি নীল-বেগুনি, ২ সেমি লম্বা, পাপড়ি আরও ছোট, নীল, আশুপাতি। শিকড় থেকে কখনো কখনো চারা গজায়। ডালের পর্বসন্ধিতেও মাঝে মধ্যে শিকড় গজায়। 

-মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক