ডিসেম্বরে শৈত্যপ্রবাহ, বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৫৬

ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় হেডলাইন জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ছবি : স্টার মেইল
সারা দেশে দিনে ও রাতে তাপমাত্রা কমা-বাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর আগেভাগেই শীত পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়তে পারে শীতের তীব্রতাও। তবে চলতি নভেম্বর মাসে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আজিজুর রহমান বলেন,‘এবছর অন্যবারের তুলনায় আগেভাগেই শীত আসবে। তবে অস্বাভাবিক রকম শীত আগেও পড়েনি, এবারও পড়বে না। বিগত দু’বছরের তুলনায় এবারে শীত মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে আগের বছরগুলোর তুলনায় শীতের প্রভাব বেশি থাকবে।’
প্রতিবছর দেশের হিমালয় অঞ্চলীয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের প্রভাব বেশি অনুভূত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এসব অঞ্চলে শীত মৌসুমের শুরু থেকেই শীতের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও দালানকোঠার জন্য দেশের শহরাঞ্চলের শীতের প্রবাহমানতা বেশি টের পাওয়া যায় না। অপরদিকে গাছপালাবেষ্টিত বিভাগ ও জেলা শহরগুলোতেও শীতের আমেজ বেশি পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, শহর বা আরবান এরিয়ায় অবকাঠামোগত ও জনসংখ্যার কারণে শীতের তাপমাত্রা কম। গ্রামঞ্চলে সবুজ বনায়ন বেশি থাকে, সেই অঞ্চলে শীতের প্রভাবও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিক অবস্থা। এসব অঞ্চলে প্রকৃতির ভারসাম্য যেমন রক্ষা পায়, তেমনি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট নানা দুর্যোগ থেকেও রক্ষা করে এই ভারসাম্য।
পরিচালক বলেন, আমাদের দেশের জলবায়ুর ধরণ অনুযায়ী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের প্রভাব বেশি অনুভূত হয়। হিমালয়ের সাথে সংযুক্ত অঞ্চল বলেই এটা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরে হলো হিমালয়। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড় আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। আর শীতের প্রভাবটা আসে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে।
তিনি আরও বলেন, চলতি নভেম্বরের শেষের দিকে তাপমাত্রা হ্রাস পাবার প্রবণতা রয়েছে, তাই শীতের প্রবণতাও বাড়বে। অপরদিকে আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুইটি মৃদু (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, শীতকাল মূলত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই শুরু হবে। নভেম্বরের শেষে তাপমাত্রা কমার প্রবণতা হ্রাস পাবে। নভেম্বরের শুরু থেকে প্রকৃতিতে ঠান্ডা বাতাসের আমেজ শুরু হলেও শীত অনুভূত হয় নভেম্বরের শেষের দিকে।
তিনি জানান, গত কয়েকদিনে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়ায় একটা হিম বাতাসের অনুভূতি পেলেও এটা শীতের পূর্বাভাস নয়। নভেম্বর মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেলেও স্বাভাবিক থাকবে গড় তাপমাত্রা।
তিনি আরও বলেন, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক-দুইটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসের শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের প্রধান নদ ও নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যস্থানে হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়ার উপাত্ত, আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, ক্লাইমেট প্রেডিক্টটেবিলিটি টুল (সিপিটি), ইসিএমডব্লিউএফ, জেএমএ, এপিসিসি-কোরিয়া, আরআইএমইএস, আইআরআই, সি৩এস ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা অনুমোদিত গ্লোবাল প্রডিউশিং সেন্টার (জিপিসিএস) থেকে পাওয়া এনডব্লিউ মডেলের পূর্বাভাস, এসওঅঅই (এল নিনো ও লা নিনার অবস্থা) ইত্যাদির যথাযথ বিশ্লেষণে এই আবহাওয়ার পরিস্থিতি জানানো হয়।
রাতের তাপমাত্রা বা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।