বাঘ গণনায় সুন্দরবনে ১২০০ ক্যামেরা বসাচ্ছে ভারত

ভারতের অংশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে ১ হাজার ২০০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ক্যামেরা বসানো। আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় বাঘের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য ক্যামেরা বসানো হবে। 

পশ্চিমবঙ্গের বন বিভাগের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এতে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে বসানো ক্যামেরাগুলো তোলা হবে আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারির মধ্যে। এর পাশাপাশি মাতলা রেঞ্জের অধীনে জঙ্গলেও ৪০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে। 

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলার বন কর্মকর্তা নিশা গোস্বামী জানান, এ বছর ট্র্যাপ ক্যামেরার সংখ্যা গতবারের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে প্রায় ১২০০টির মতো ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে। এগুলো হলো সজনেখালি, গোসাবা বাঘনা ও বিদ্যা রেঞ্জ। প্রসঙ্গত, ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে সুন্দরবনে বনাঞ্চল রয়েছে ১০ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। যার মধ্যে ভারতে রয়েছে ৪ হাজার ৭২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা, অর্থাৎ ৩৮ শতাংশ ভারতের মধ্যে রয়েছে। বাকিটা রয়েছে বাংলাদেশে। 

ভারতের মধ্যে থাকা পুরো সুন্দরবন জঙ্গলজুড়েই এই ক্যামেরাগুলো বসানো হবে। কীভাবে ক্যামেরা লাগাতে হবে সেই প্রশিক্ষণ আগেই দেওয়া হয়েছে বন দপ্তরের কর্মীদের। এ ছাড়া দক্ষিণ চব্শি পরগনা বন বিভাগের অধীনে রায়দিঘি রেঞ্জ, রামগঙ্গা রেঞ্জে ১৪০টি করে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হবে। জঙ্গলে কোথায় বেশি বাঘ ঘোরাঘুরি করছে তা এই ক্যামেরার মাধ্যমে সহজেই রেকর্ড করা যাবে। বন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই ৩০ দিন ধরে কোনো এলাকায় বাঘ আসে না। সে কথা মাথায় রেখে ট্র্যাপ ক্যামেরা ৪৫ দিন ধরে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাঘের গতিবিধি নজরে আসবে। 

এই ক্যামেরাগুলো অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয়। এগুলোর ব্যাটারির মেয়াদ থাকবে ৪৫ দিন পর্যন্ত। কোনও বাঘ ক্যামেরা বসানো জায়গায় ৩০ দিন না এলেও পরে ঘুরতে ঘুরতে সেখানে হাজির হতে পারে। তখন তার ছবি ধরা পড়বে। এছাড়া স্বয়ংক্রীয় এই ক্যামেরা চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাটারির মেয়াদ (চার্জ থাকা পর্যন্ত) থাকে ৪৫ দিন পর্যন্ত। এই পুরো সময়টা কাজে লাগাতে চাইছেন বন দপ্তরের কর্মকর্তারা। 

উল্লেখ্য, গতবারের মতো এবারও মেছো বিড়াল, বুনো শুকর-সহ অন্যান্য প্রাণীর ছবিও ধরা পড়বে। পরে সেগুলিও পর্যালোচনা করা হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা আঞ্চলিক বনবিভাগ এবং সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতাধীন জঙ্গলে একই সঙ্গে এই শুমারির কাজ হবে বলে ঠিক হয়েছে। ক্যামেরা কীভাবে বসাতে হবে, সেজন্য বনকর্মীদের নিয়ে একপ্রস্থ  প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বাঘেদের চলন, কে কখন দৌড়ে শিকার করছে, কিভাবে শাবকদের নিয়ে মা বিশ্রাম নিচ্ছে, এসব যেমন আগেরবার ধরা পড়েছিল। এবার আশা করা হচ্ছে আরও অনেক অজানা তথ্য ট্র্যাপ ক্যামেরার সাহায্য হাতে আসবে।

এদিকে, বাঘের গণনার কাজের জন্য আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল পর্যটকদের জন্য শুক্রবার করে বন্ধ থাকবে। তবে কাজটি হয়ে গেলে আর এই নিয়ম মানা হবে না। বন দপ্তর সূত্রে খবর, বাঘেদের যাতায়াত, দৌড়ে শিকার ধরা, শাবকদের নিয়ে মা বাঘের বিশ্রাম সব ধরা পড়বে ক্যামেরায়। সঙ্গে উঠে আসতে পারে অনেক অজানা তথ্য। তবে এই ক্যামেরায় যে শুধু বাঘ ধরা পড়বে তা নয়, গতবারের মতো এবারও মেছো বিড়াল, বুনো শূকরসহ অন্যান্য প্রাণীর ছবিও ধরা পড়বে বলে জানাচ্ছে বন বিভাগ। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh