Logo
×

Follow Us

প্রবন্ধ

শহীদ কাদরী: বিরলপ্রজ এক কাব্য প্রতিভা

Icon

ত্বাইরান আবির

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২০, ১৮:০০

শহীদ কাদরী: বিরলপ্রজ এক কাব্য প্রতিভা

ছবি: সংগৃহীত

আপনারা জানেন
শহীদ কাদরী

'Philosophers have only interpreted the world in various ways, the point however is to change it.'
 -Marx, Theses on Feuerbach.
আপনারা জানেন
মহামতি প্লেটো কী বলেছেন...
দার্শনিক কান্ট কী বলেছেন...
হেগেল কী বলেছেন...
মহামতি বুদ্ধ কী বলেছেন...
দেকার্তে কিংবা
বের্গস কী বলেছেন...
বার্ট্রান্ড রাসেল কী বলেছেন...
হোয়াইটহেড কী বলেছেন...
জীবনানন্দ দাশ কী বলেছেন...
বুদ্ধদেব বসু কিংবা বিষ্ণু দে কী বলেছেন...
কী বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ!
কী বলেছেন কবিকুলচূড়ামণি মাইকেল!
আপনারা জানেন
ঈশ্বরের পুত্র যিশু কী বলেছেন...
ইউরিপিডিস কিংবা সফোক্লিস কী বলেছেন...
মিশেল ফুকো কী বলেছেন,
দেরিদ্দা কী বলেছেন
কী বলেছেন পিকাসো
কিংবা পল এলুয়ার!
এই গ্রহের মহাপুরুষরা কে কী বলেছেন
আপনারা সবাই জানেন।

(আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও- কাব্যগ্রন্থ হতে)

শুরুটা করলাম প্রিয় কবির কবিতা দিয়েই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং জীবনানন্দ ত্রয়ীর হাত ধরে সেই যে বাংলা কবিতা হেঁটেছে সমৃদ্ধির পথে, আজও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এই তিন দিকপালের পর বাংলা কবিতাকে আরো সমৃদ্ধির পথে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীর কবিগণ। শামসুর রহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হকের মত প্রখ্যাত কবিরা বাংলা কবিতার পালে হাওয়া দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরো কবির অংশগ্রহণ ছিলো এই যাত্রায়। ভবিষ্যতে আরো হবে। কিন্তু আমার মনে হয় উপরিউক্ত কবিরা বিখ্যাত হলেও তাদেরই সমসাময়িক শতাব্দীর এক কবির নামডাক একটু কমই শোনা যায়। তিনি শহীদ কাদরী। হয়তো তিনি কম কবিতা লিখেছেন। হয়তো তিনি সমসাময়িকদের তুলনায় ছন্দের বাইরে গিয়ে একটু গদ্যের ভেতরই ডুবে ছিলেন বেশি। অথবা তিনি তার কবিতার মানের মত পাঠক কমই পেয়েছিলেন, যার কারণে তাকে নিয়ে দেখা যায়নি বাকিদের মত কলরব। তবুও তিনি অনন্য। তার কবিতা অন্যরকম বার্তা দেয়। অন্যরকম জীবনবোধে ভেতরটা নাড়া দেয়। এজন্যই উত্তরকালে তিনি আরো মানুষের মনে জায়গা করে নেবেন- এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তারই প্রমাণ বহন করে কবি শহীদ কাদরীর সকল কবিতা।

১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট ক্ষণজন্মা এই কবি জন্মগ্রহণ করেন। তার মৃত্যুও হয়েছে বেশিদিন হয়নি। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট শক্তিশালী এই কবি আমাদেরকে ছেড়ে চিরতরে চলে যান। ৭৪ বছরের দীর্ঘ এক জীবনে শহীদ কাদরী খুব বেশি লেখা লিখেননি। তার কবিতার সংখ্যা হাতে গোণা। পঞ্চাশ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি লিখেছেন প্রায় দেড়শোর মত কবিতা। সংখ্যাটা একেবারে নগণ্য মনে হতে পারে সবার কাছে, যেখানে অনেক কবিই এত লম্বা সময়ে হাজারের বেশি কবিতা লিখে থাকেন। কিন্তু কবি শহীদ কাদরীর এই দেড়শো কবিতাই বাংলা সাহিত্যের মধ্যে অমূল্য এক সংযোজন। তার মত কবি সারা বিশ্বে কম পাওয়া যাবে। মস্তিষ্কের মধ্যে কল্পনার রঙে আঁকা রঙতুলির ক্যানভাসকে যাচাই-বাছাই শেষেই তিনি কলমে এঁকেছেন শব্দে শব্দে তার কবিতাগুলো। তাই বলা চলে কবির প্রত্যেকটি কবিতাই তার সেরা কবিতা। যাপিত জীবনে বিদেশ বিভুইয়ে কাটিয়েছেন কবি। তবুও স্বদেশের প্রতি তার একটুও টান কমেনি। বৈরাগ্য তাকে স্পর্শ করেনি। প্রবাসে বসেই তিনি তার কলম চালিয়ে গেছেন দিনের পর দিন। লিখে গেছেন একের পর এক শ্রেষ্ঠ কবিতা। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১১ সালে একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করা হয় তাকে। শহীদ কাদরীর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- উত্তরাধিকার, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোন ক্রন্দন নেই, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও। এই চারটি কাব্যগ্রন্থ দিয়েই তিনি বাংলাদেশের পাঠকের মনে স্থায়ী আসন গেঁড়ে নিয়েছেন। এমনকি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেও তিনি বহু বছর জীবিত থাকবেন।

এই চারটি কাব্যগ্রন্থের মাঝেই গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে তার সকল শ্রেষ্ঠ কবিতা। তার লেখার সংখ্যা সামান্য হলেও সেখানে দর্শন রয়েছে, গভীরতা রয়েছে। প্রজ্ঞা, আপনারা জানেন, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে একদিন এবং নিষিদ্ধ পল্লীতে- এর মত কবিতা পাঠক পড়ামাত্রই বুঝতে পারবেন কেন শহীদ কাদরীকে শক্তিশালী কবি বলা হয়। তার কবিতাগুলো অল্পেই বেশি কথা বলে দেয়, বাস্তবতার জানান দেয়, তুলে আনে জীবন দর্শন। এজন্য কবিতাগুলো হয়ে ওঠে সকল পাঠকের কাছে অসামান্য, অবশ্য পাঠ্য। শহীদ কাদরী মানেই দুর্দান্ত সব কবিতার মিশেল, তার কবিতা মানেই পাঠকের আগ্রহ আরেক ধাপ বেড়ে যাওয়া- কবিতার প্রতি- কবিতার জন্য। কবিতাগুলোর অসামান্য, মেদহীন প্রকাশ পাঠকের কাছে তার কবিতাকে করেছে আরো জনপ্রিয়। আর জীবনবোধ, প্রবল দার্শনিক ছাপের কারণে সকল সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে কবিতাগুলো হয়ে উঠেছে আধুনিক। আর আধুনিক সেই কবিতাকে জনমানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতেই আমার এই স্মরণিকা। প্রিয় কবিকে স্মরণ করা। কবিতাকে পড়া হোক সবার। শহীদ কাদরীকে পড়া হোক। তার অসামান্য কবিতা পড়া হোক। এই প্রত্যাশা রাখি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫