Logo
×

Follow Us

ইউরোপ

ম্যাক্রোঁর প্রধানমন্ত্রীকে কেন চায় না ফ্রান্স

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৮

ম্যাক্রোঁর প্রধানমন্ত্রীকে কেন চায় না ফ্রান্স

রাজনৈতিক অচলাবস্থা ফ্রান্সে। ছবি: সংগৃহীত

ডানের বিরুদ্ধে বামের লড়াই বোধকরি সব সময়ের। ফরাসিরা আবার সেই বিভাজিকায় মুখোমুখি হলো। একদিকে মাত্র একজন মানুষ। তার বিপরীতে লাখো মানুষ। সেই একজন হলেন ডানপন্থি। আর তার বিরুদ্ধে সোচ্চার জনতা বাম-মননের। ডানপন্থি সেই নেতার নাম মিশেল বার্নিয়ে।

টানা কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবসানের লক্ষ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যাকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন। দেশটির সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু ম্যাক্রোঁ তাকে মনোনীত করার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে ফ্রান্সের রাস্তায় নেমে পড়েন বিক্ষুব্ধ বাম জনতা। 

কিন্তু কেন এই বিক্ষোভ? মাস দুয়েক আগে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে বেশিরভাগ আসন পায় বামপন্থিরা। তাই বামপন্থিদের এড়িয়ে একজন ডানপন্থিকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নেওয়ার প্রতিবাদেই এ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও বামপন্থি দল। বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেন বেছে নিয়েছেন, ম্যাক্রোঁ এর ব্যাখ্যা সেভাবে হাজির করেননি। তবে ম্যাক্রোঁর এই পছন্দকে ঘিরে শুরুতেই অসন্তোষ দেখিয়েছে বামপন্থি রাজনৈতিক জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি)। আগাম নির্বাচনে তারা সবচেয়ে বেশি আসন পায়। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে এনএফপি সবচেয়ে ভালো করলেও ডানপন্থি একজনকে প্রধানমন্ত্রী করা হলো। যদিও বার্নিয়ে বলেছেন, বামপন্থিসহ সব ধারার রাজনীতিকদের নিয়ে তিনি সরকার পরিচালনা করবেন। 

ব্রেক্সিট বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষে একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বার্নিয়ে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একাধিক আলোচনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ফ্রান্সের রিপাবলিকান পার্টির (এলআর) হয়ে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন বার্নিয়ে। ছিলেন ফ্রান্স ও ইইউয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ পদেও। বার্নিয়ের বিরুদ্ধে প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন কট্টর বামপন্থি ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টির নেতা জ্যঁ-লুক মেলেশোঁ। সেখানে স্লোগান দিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য ম্যাক্রোঁর কূটকৌশল রুখে দিতে হবে। এ সময় সেখানে উপস্থিত অন্যদের ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে’, ‘নির্বাচন চুরি হয়ে গেছে-এমন স্লোগান দিতে শোনা যায়। 

তাহলে ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে চেয়েছিল বামপন্থি দলগুলো? তার নাম লুসি কাস্তে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন ম্যাক্রোঁ। তার ভাষ্য ছিল, জাতীয় পরিষদে যদি আস্থা ভোটের আয়োজন করা হয়, তাহলে কাস্তের টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, বিক্ষোভ যেমনই হোক না কেন, আস্থা ভোট হলে উতরে যাবেন বার্নিয়ে। কারণ জাতীয় পরিষদের ডানপন্থিরা জানিয়েছেন, তারা বার্নিয়ের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন না। পরিষদে ডানপন্থিদেরও অনেক আসন রয়েছে। এ সমর্থনের কারণেও সমালোচনার মুখে পড়ছেন বার্নিয়ে। অভিযোগ করা হচ্ছে, সমর্থন পাওয়ার জন্য ডানপন্থিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন তিনি।

গত জুন ও জুলাইয়ে ফ্রান্সে আগাম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে রাজনৈতিকভাবে বড় তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে দেশটির পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদ। এখন এই বিভক্তি এড়িয়ে টেকসই একটি সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ হাতে নিতে হবে মিশেল বার্নিয়েকে। 

১৯৫৮ সালে ফ্রান্সে নতুন প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী বার্নিয়ে। তিন বছর আগে তিনি ম্যাক্রোঁকে সরিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে চেয়েছিলেন। দেশটিতে অভিবাসন সীমিত করা এবং নিয়ন্ত্রণে আনার কথা তুলেছিলেন তিনি। তবে সেবার নিজ দল থেকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হননি। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়াল আতালের জায়গায় বসেছেন বার্নিয়ে। চলতি বছরের শুরুর দিকে আতালকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। গত জুলাই থেকে ফ্রান্সের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫