
সংগৃহীত ছবি
ইউক্রেনে রাশিয়ার
হামলার ষষ্ঠ দিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন,
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির মধ্যে
শান্তি আলোচনার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। আলোচনার বিষয়েই এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই। মঙ্গলবার (১
মার্চ) রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসকে দিমিত্রি পেসকভ এ কথা বলেন।
পঞ্চম দিনে
রাশিয়া-ইউক্রেনের শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারে বলে
ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু হামলার ষষ্ঠ দিনে ইউক্রেন সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মঙ্গলবার
রুশ প্রেসিডেন্টের ওই প্রেস সেক্রেটারির বক্তব্য রাশিয়ার কঠোর অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত দিল।
মঙ্গলবার সকালে রাশিয়ার প্রায়
৪০ মাইল লম্বা একটি সাঁজোয়া বহরের ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহচিত্রে। বহরটি ধীরে ধীরে ইউক্রেনের
রাজধানী কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে। ওই বহরে সেনাসদস্যর সঙ্গে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি আছে।
এ ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই কিয়েভ-সংলগ্ন এলাকায় বোমা ফেলতে শুরু করেছে রাশিয়া। কিয়েভে
হামলার সাইরেনও বাজানো হচ্ছে।
ইউক্রেনের দ্বিতীয়
বৃহত্তম শহর খারকিভেও চরম লড়াই চলছে। মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের
প্রাণকেন্দ্র ফ্রিডম স্কয়ারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এ শহরে ১৬ লাখ মানুষ
বসবাস করেন। শহরের আঞ্চলিক প্রধান ওলে সিনেহুবভ অভিযোগ করে বলেন, রুশ বাহিনী আবাসিক
এলাকা লক্ষ্য করে গ্র্যাড ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। এটি ট্রাকে স্থাপিত এমন একধরনের ক্ষেপণাস্ত্র
ব্যবস্থা, যা একসঙ্গে অনেকগুলো গোলা ছুড়তে সক্ষম।
সাবেক
রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ফেদরোভ জানিয়েছিলেন, ২ মার্চের মধ্যেই
জয়ের মধ্য দিয়ে ইউক্রেন অভিযান শেষ করতে চান
পুতিন। আর মঙ্গলবার ৪০ মাইলের সাঁজোয়া
বহর সেই ২ মার্চের
মধ্য যুদ্ধ শেষ করার ইঙ্গিত
দিচ্ছে তা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে। রুশ বাহিনী আজ খুব নির্মমভাবে
খারকিভকে কামানের গোলার নিশানা করেছে। এটি একটি শান্তিপূর্ণ স্থান, শান্তিপূর্ণ শহরতলী…
রুশরা জানে তারা কোথায় গোলাবর্ষণ করছে।’
এদিকে মঙ্গলবার
সুইজারল্যান্ডে জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই
ল্যাভরভ বলেছেন, ইউরোপীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি মেনে নেওয়া
যাবে না। অস্ত্রগুলোর এখন বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে।
সম্মেলনে
যোগ দিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জেনেভা যাওয়ার
কথা ছিল। কিন্তু ইউক্রেনে
রুশ হামলার জেরে ইউরোপীয় দেশগুলোর দেওয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি যেতে পারেননি।
তাই সম্মেলনে ধারণ করা
একটি ভিডিও বার্তা পাঠান তিনি। সে ভিডিওতেই এ কথা
বলেন সের্গেই ল্যাভরভ।
অন্যদিকে, ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জরুরি বিশেষ অধিবেশনে বসেছে। ১৯৫৬ সাল থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এটা মাত্র ১১তম জরুরি বিশেষ অধিবেশন। এ অধিবেশনের জেরে সপ্তাহের শেষের দিকে ইউক্রেনে হামলা চালানোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অবশ্য ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা কোনো দেশের নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্ররা ধারণা করছেন, প্রস্তাব তোলার পর তা পাস হতে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাওয়া যাবে।
মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কখনোই রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিষয়ে তাদের অবস্থান থেকে টলাতে পারবে না। তিনি জানান, ইউক্রেনে সাধারণ জনগণকে লক্ষ্য করে গুচ্ছবোমা ও ভ্যাকুয়াম বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ইউক্রেনকে নাৎসিবাদের প্রভাবমুক্ত এবং নিরস্ত্রীকরণ করতে এ বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। রুশ কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই এ দাবি করে আসছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। তারপরেই ইউক্রেন হঠাৎ অভিযান চালায় রুশ বাহিনী। যা এখন পর্যন্ত স্থায়ী রয়েছে।