জেন-জির ফ্যাশনধারা

সময়ের সঙ্গে ফ্যাশনের বিবর্তন হয়। কখনো পুরোনো ফ্যাশন নতুন হয়ে ফিরে আসে, আবার কখনো পুরোনো বদলে সম্পূর্ণ নতুন ফ্যাশনের আবির্ভাব হয়। বিবর্তন মূলত ফ্যাশনের একটি ধারা। প্রজন্মভেদে এই বিবর্তন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিশ্বে জেনারেশন জেড বা জেন-জি প্রজন্ম বেশ আলোচনায় আছে। তারাও মেতেছে নতুন ধারার ফ্যাশন ট্রেন্ডে। কী সেই ট্রেন্ড?

এই প্রজন্ম অল্প বয়স থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে। তাই তারা বৈশ্বিক ফ্যাশন ট্রেন্ডকে অনুসরণ করে। বলা হয়, জেন-জিদের ফ্যাশন সর্বজনীন। তাদের কাছে দেশ-কাল, নারী-পুরুষ মুখ্য বিষয় নয়। তারা বৈশ্বিক ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুসরণ করলেও নিজেদের নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখে না। তারা যেমন নতুন ট্রেন্ড গ্রহণ করে, আবার পুরোনো স্টাইল রিক্রিয়েট করতে আপত্তি করে না। এ কারণে তাদের হাত ধরে অতীতের অনেক ফ্যাশন আবার ফিরে এসেছে। যেমন- নব্বই দশকের গোড়ার দিকের ব্যাগেট হ্যান্ডব্যাগ ও প্ল্যাটফর্ম সু, আশির দশকের বাইকার শর্টস, ষাটের দশকের ক্রু নেক। এমনকি বিশ দশকের মুক্তার নেকলেসও কেউ কেউ ব্যবহার করে। তাদের ফ্যাশনে ফিউশন, ইউনিসেক্স কিংবা ওল্ড স্কুল জায়গা করে নিয়েছে। তাদের কাছে টার্টলনেক ও কিউবান কলার শার্ট ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর বিশেষভাবে বলতে গেলে এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অর্জন ইউনিসেক্স বা লিঙ্গ-নিরপেক্ষ পোশাক। অথচ কয়েক দশক আগে এই বিষয়টি কেউ ভাবতে পারেনি। কিন্তু একুশ শতকে এসে জেন-জিরা প্রমাণ করেছে, পোশাকও লিঙ্গনিরপেক্ষ হতে পারে। এ ধরনের পোশাকই এখন ট্রেন্ডি।

ফলে জেন-জির মাধ্যমে ফ্যাশনশিল্প পরিবর্তিত হচ্ছে। তারা ফ্যাশনে সব সময় নিজের স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। ফ্যাশন ডিজাইনার সাদিয়া ইসলাম মনে করেন, এই প্রজন্ম আরামদায়ক পোশাক পরে। এরা বিশ্বাস করে ফ্যাশন মানে হাইহিল কিংবা টাইট বডিকন পোশাক নয়। পুরো বিশ্বের জেন-জিরা একই ধরনের পোশাক পরে থাকে। তাদের ফ্যাশন কোনো দেশের সীমানার মধ্যে আটকে নেই। তারা নিজেদের বৈশ্বিক নাগরিক ভাবতে পছন্দ করে।

জেন-জি কেবল আরামদায়ক পোশাক পরে না, বরং পোশাকে রঙের ক্ষেত্রে তারা নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম মানে না। সব ধরনের রঙের পোশাক তাদের পরতে দেখা যায়। কারণ তারা মনে করে, যা পরবে তাই ট্রেন্ডি। ছেলেরা বিভিন্ন নকশার শার্ট ও হাফপ্যান্ট বা ঢোলা জিন্স পরে। তার সঙ্গে পায়ে থাকে কেডস অথবা লোফার। এ ছাড়া কালো ট্রাউজার ও ঢিলেঢালা ম্যাচিং টি-শার্টও তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তারা মিলেনিয়াল যুগের স্কিনি জিনস থেকে বের হয়ে ঢিলেঢালা জিনস পরছে।

একটা সময় ফাস্ট ফ্যাশনের জোয়ার ছিল। ফলে ঘরের আলমারি ভরা পোশাক খুব সাধারণ একটি ব্যাপার ছিল। কিন্তু জেন-জিরা সেখানেও পরিবর্তন এনেছে। তারা একটি পোশাক একবার নয়, একাধিকবার ব্যবহার করছে। মানে তারা একটি পোশাকের পুনর্ব্যবহার করে। একটি পোশাককে যখন বিভিন্নভাবে পরা যায়, তখন ঘরে অনেক থাকা লাগে না। অর্থাৎ ফ্যাশন বর্জ্য কম তৈরি হবে, তাতে পরিবেশ বাঁচবে। তাই ফ্যাশন বর্জ্যরে আগ্রাসন দূর করতে একই পণ্য বারবার ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছে জেন-জি।

মেকআপের ক্ষেত্রে জেন-জি তরুণীরা মিনিমাল বা ন্যুড বেস মেকআপ বেশি পছন্দ করে। তাদের প্রিয় হলো ভালো মানের ফাউন্ডেশন, কনসিলার, মাসকারা, লিপ অ্যান্ড ফেস টিন্ট, ন্যুড আইশ্যাডো কালার। এই প্রজন্মের তরুণীরা ভারী মেকআপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। মোট কথা মিনিমাল সাজটাই এদের কাছে বেশি প্রাধান্য পায়। কারণ তারা মনে করে, এভাবে তাদের স্মার্ট লাগবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh