‘প্রধান উপদেষ্টাকেও হেয় করা হয়েছে’, শিক্ষক বরখাস্তের ব্যাখ্যায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ২০:০২

ফেসবুকে লিখে বরখাস্ত হয়েছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিবুল হক বসুনীয়া।
ফেসবুকে লেখালেখির কারণে কুড়িগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে বরখাস্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে সোমবার সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায় মন্ত্রণালয়। তাতে সেই শিক্ষক কী কী লিখেছেন, তা তুলে ধরে একে সরকারি কর্মচারী বিধিমালাও ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকার সুস্পষ্ট লংঘন বলেও মন্তব্য করা হয়।
শনিবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিবুল হক বসুনীয়াকে বরখাস্ত করার আদেশ জারি করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী।
সংবাদ মাধ্যমে লেখা হয় প্রায় চার মাস আগে অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন শিক্ষক মনিবুল। তিনি বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন।
তবে চার মাস আগে উপদেষ্টা বিধানকে নিয়ে লেখার কারণে এই সিদ্ধান্ত-এমন কথা অস্বীকার করেছে মন্ত্রণাল।ডবিবৃতিতে সেই শিক্ষকের পোস্ট তুলে ধরে বলা হয়, সেই শিক্ষকের পোস্টে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার এমনকি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেও ‘হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে’।
মন্ত্রণালয় বলছে, “সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত কর্মচারী হয়ে সরকারি বিধিবহির্ভূত আচরণ এবং একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ‘কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য’ প্রদানের ফলশ্রুতিতে বর্ণিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক’ উল্লেখ করে ‘বিভ্রান্তি দুর’ এবং ‘প্রকৃত ঘটনা’ স্পষ্ট করতে এই বিবৃতি দেওয়ার কথাও বলা হয়।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা কী
বিবৃতিতে বলা হয়, কুড়িগ্রাম জেলাধীন রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিবুল হক বসুনীয়া তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে গত ১২ মে একটি ‘নেতিবাচক ও কুরুচিপূর্ণ’ পোস্ট করেন।
“এই পোস্টে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘণ্টা বৃদ্ধি, শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখা, এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষা (উচ্চারণযোগ্য নয়) ব্যবহার করে তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন।”
পোস্টে গত ১০ মে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৪ প্রদান এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘণ্টা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আলোচনাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলেও মনে করে মন্ত্রণালয়।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারা বছরে বিদ্যালয় খোলা থাকবে ১৭৯ দিন। একে ‘মাত্র’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রণালয় বলছেন, “বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় তা অনেক কম। এতো অল্প শিখন ঘণ্টা দিয়ে কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব নয়।”
মূলত এ পরিপ্রেক্ষিতেই শিক্ষকদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখার প্রসঙ্গটি আলোচিত হয় বলে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিখন ঘণ্টা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআইগুলোকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে পরিণত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন।
সেই শিক্ষক শিক্ষকদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে ‘শিষ্টাচার বহির্ভূত’ ও বিরূপ মন্তব্য করেন বলেও উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।
এমন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯ এর ৭(ঘ) এবং ১০(ঙ)(ছ) (পরিমার্জিত সংস্করণ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর আওতায় অসদাচরণের শামিল বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
কী লিখেছিলেন সেই শিক্ষক
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেই শিক্ষক ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘‘এই যে শিখন ঘণ্টা বাড়াতে চাচ্ছে কেডা এইডা? এইডা আবার দেকতাসি শনিবারও স্কুল খোলার কতা কইতাসে।”
‘ভ্যাকেশন, নন ভ্যাকেশন অন্য ব্যাপার’ উল্লেখ করে সেই শিক্ষক আরও লেখেন, “জানি না এইডা কোন পদে আছে। তবে কথা শুইন্যাতো মনে হইতাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে।
“আমারে একখান কতা বুঝান তো... এইগুলারে কই থেকে ধইর্যা আইনা এই ডিপার্টমেন্টে বসায়? আর কারাই বা বসায়?”
প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার জন্য এরা কী কী পরীক্ষা দিয়ে এসেছে? সেই প্রশ্ন তুলে শিক্ষক বসুনিয়া আরও লেখেন. “নাকি ক্যাডার-ম্যাডার হইলে যে কেউ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বোদ্ধা হয়ে যায়? এইগুলার কী বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে ক্লাস নেয়ার “
এরা কতদিন স্কুলে ক্লাস নিয়েছেন- সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এছাড়াও এ পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “ফাইজলামো করেন সমস্যা নাই। তয় লিমিট ক্রসে যাইয়েন না, সেটা হোক ডিজি, সচিব, উপদেষ্টা কিংবা প্রধান উপদেষ্টা।”
এ বিষয়ে শিক্ষক বসুনিয়ার কোনো মন্তব্য জানতে পারেনি সাম্প্রতিক দেশকাল