
একসময় ‘পরীযায়ী পাখি’ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন বাংলাদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে শামুকখোল বা ‘এশিয়ান ওপেনবিল’। বাংলাদেশের সমতল, উপকূলীয় ও হাওরাঞ্চল ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদসহ বিভিন্ন এলাকায় এশিয়ান শামুকখোলের বিচরণ দেখা যায়।
সম্প্রতি রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার শলক নদ তীরবর্তী এলাকায় অবাধে বিচরণ করতে দেখা গেছে এশিয়ান শামুকখোল পাখির কয়েকটি ঝাঁক।
গ্রীষ্মকালীন কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে ভেসে ওঠে জুরাছড়ির শলক নদ। নদেও দুইপাশের বিস্তীর্ণ তীরে ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়াউড়ি ও খাদ্য সংগ্রহ করছে শামুকখোল।
স্থানীয় বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষকদের ভাষ্য, ফাঁদ পেতে শিকারসহ নানা কারণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে এখন আর আগের মতো এশিয়ান শামুকখোল দেখা যাচ্ছে না। নির্বিচারে শিকার, ভক্ষণ, আশ্রয় বা আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে অনেক প্রাণী, পশু-পাখী প্রকৃতিতে আর টিকে নেই।
সে জন্য বন্যপ্রাণী ও পাখি প্রজাতি প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ার পাশাপাশি শিকার বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি মনে করছেন গবেষকরা।
শলক নদের তীরবর্তী এলাকা থেকে সম্প্রতি শামুকখোল পাখির ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী রূপায়ন চাকমা। জানতে চাইলে রূপায়ন চাকমা বলেন, ‘রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলায় যাওয়ার পথে শলক নদের পাড়ে শামুকখোল নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছে। এই পাখিগুলোকে স্থানীয় ভাষায় বক পাখি বলা হয়।
শলক নদের পারে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার জন্য আবাসস্থল নির্ধারণ করেছে শামুকখোল। পাখিগুলো যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে, সে জন্য স্থানীয়দের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কেউ যেন পাখি শিকার না করে।’
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী নিয়ে সর্বশেষ ২০১৫ সালে একটি লাল তালিকা প্রকাশ করে।
এরপর দেশে আর কোনো গবেষণা বা লাল তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ও পাখি নিয়েও নেই কোনো জরিপ বা পরিসংখ্যান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে জরিপ কার্যক্রম প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় গবেষকরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী সংগঠন বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির প্রধান সংগঠক প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আগে শামুকখোল পাখি প্রচুর দেখা যেত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেটি অনেক কমে গেছে।
রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার নৌপথে যেভাবে শামুকখোল পাখির বিচরণ দেখা যাচ্ছে; এটা খুবই ইতিবাচক দিক। আমাদের এই পাখিগুলো শিকার বন্ধ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে হবে। যেন কেউ শিকার করতে না পারে। যারা বন্যপ্রাণী ও
জীববৈচিত্র্য রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এখানে স্থানীয় পর্যায়ে পাখিশুমারি করা দরকার। এতে করে আমরা বুঝতে পারব পাখির প্রজাতি বেড়েছে নাকি কমেছে।