Logo
×

Follow Us

ফিচার

সমন্বিত খামারে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

Icon

আরিফুর রহমান

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ২১:১৫

সমন্বিত খামারে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সমন্বিত মৎস্য খামার। মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। কিন্তু অর্থনৈতিক সচ্ছলতার হাতছানির আড়ালে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতির খামার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, লেয়ার ও ব্রয়লার মিলে আটটি ইউনিয়নের ৭২টি ওয়ার্ডে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মোট খামারের সংখ্যা ৬১টি। কিন্তু পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির পার্থক্য রয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক সমন্বিত খামার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ পোলট্রি খামার সমন্বিত পদ্ধতির বাইরে। 

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ২০২৩-২৪ সালের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী সমন্বিত পোলট্রি খামারের সংখ্যা ২০৭। তবে এ সংখ্যা মাঠ পর্যায়ে তিন গুণ হতে পারে। সমন্বিত পোলট্রির সংখ্যা যাই হোক, এ পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীববৈচিত্র্য এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান জানান, সমন্বিত খামারের ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের পাশাপাশি মাছের স্বাদও বিনষ্ট হচ্ছে। 

সুবর্ণচরে চলতি অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৪৮৭ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬৯০ মেট্রিক টন বেশি। উপজেলায় প্রায় চার লাখ মানুষের ২৯ মেট্রিক টন মাছের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় চাহিদা মেটাতেও ভূমিকা রাখছে।

সুবর্ণচরে উৎপাদিত মাছ জিডিপিতে ০.২৮ শতাংশ অবদান রেখে চলছে। তবে সব প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমন্বিত মাছ চাষ একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। যেখানে সব প্রজাতির মাছ উৎপন্ন সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুকুরের পানিতে সরাসরি পোলট্রি খামার, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির বর্জ্য মিশে গিয়ে পানি দূষিত হচ্ছে। এই পানিতে ছোট ছোট জীব ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।

পোলট্রি বর্জ্যে পানির গুণগত মান ও জলজ প্রাণীর খাদ্য শৃঙ্খল বিনষ্ট হচ্ছে। পুকুরে বাড়ছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ। বিশেষ করে পোলট্রিতে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক বর্জ্যরে মাধ্যমে মাছের শরীরে মিশে পরোক্ষভাবে তা মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “খাবারের সঙ্গে আমরা নিজের অজান্তেই বিষ খাচ্ছি। প্রোটিন, আমিষ ও ভিটামিন ‘এ’-এর জন্য মাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সমন্বিত পোলট্রি  অথবা গবাদিপশুর খামারে যদি দ্রুত বৃদ্ধিকারক রাসায়নিক ফিড ব্যবহার করে অথবা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে তাহলে এটা মানবদেহেও আসতে পারে। ফলে ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, গর্ভবতী মায়ের নানা জটিলতা ও শিশু বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। 

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মুহিনুজ্জামান।

তিনি বলেন, সমন্বিত পোলট্রি খামারে পানি স্বাভাবিক রাখার  ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।  দূষিত হচ্ছে মাটি ও পরিবেশ। 

দূষিত পানির ফলে বিভিন্ন প্রাণী মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে মাছের স্বাভাবিক খাদ্য শৃঙ্খল বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে মাছ উৎপাদনে একটা ঝুঁকি রয়েছে। 

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পোলট্রি খামারে যদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, তার কিছু অংশ মাছের মধ্য দিয়ে মানবদেহে ও অন্যান্য প্রাণীর শরীরে যাচ্ছে। গবেষণা শেষ হলে আমরা বহুমাত্রিক সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।

সমন্বিত পোলট্রি খামারের সরকারি অনুমোদন আছে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আসফার সায়মা জানান, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে অনিবন্ধিত ও পরিবেশ প্রকৃতি এবং জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিতকারী সমন্বিত পোলট্রি খামারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫