Logo
×

Follow Us

ফিচার

হোসে মুহিকার সংগ্রামমুখর অনাড়ম্বর জীবন

Icon

বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১১:২৫

হোসে মুহিকার সংগ্রামমুখর অনাড়ম্বর জীবন

উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্টে হোসে মুহিকা। ছবি: সংগৃহীত

৮৯ বছর বয়সে গত ১৪ মে হোসে মুহিকা চলে গেলেন। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন মুহিকা। তার জীবন ছিল রোমাঞ্চকর, সংগ্রামমুখর এবং অবশ্যই অনাড়ম্বর।

রাউল সেন্ডিক আন্তোনাসিওর নেতৃত্বে ১৯৬৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে বামপন্থি গেরিলা সংগঠন ‘তুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (এমএলটিএন)’। হোসে মুহিকা ছিলেন এই গেরিলা দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। 

তুপামারোস ছিল আরবান গেরিলা দল। ১৯৬৮ সালের মধ্যেই গেরিলা দলটি বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সালের ভেতর উরুগুয়েতে একের পর এক আলোচিত দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসতে থাকে। এতে গেরিলা দলটির জনসমর্থন বেড়ে যায়।

গেরিলারা বিত্তশালী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ও খাবার লুট করে গরিবদের মাঝে বিলি করত এবং এর পাশাপাশি সরকারের দমনপীড়ন রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে বিদেশি কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের অপহরণ করতেন। তুপামারোসের বিরুদ্ধে কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়। যেহেতু তারা সশস্ত্র গেরিলা দল, তাই হত্যায় নাম জড়িয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।

কিন্তু হোসে মুহিকা আমৃত্যু বলে এসেছেন, তিনি কখনো কাউকে হত্যা করেননি। অর্থাৎ তার হাতে কোনো হত্যা ঘটেনি মুহিকা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন।

গেরিলা জীবনে মুহিকা চারবার কারাবন্দি হন এবং ১৪ বছর কারাগারে কাটান। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে পুন্তা ক্যারেটাস কারাগার থেকে ১০৫ জন বন্দিসহ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালিয়ে যান মুহিকা, যা সে সময় বেশ আলোড়ন তোলে। কিন্তু ঘটনার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে পুনরায় বন্দি করা হয়।

১৯৭২ সালের এপ্রিলে পুন্তা ক্যারেটাস থেকে আবারও পালিয়ে যান মুহিকা। একই বছরেই তিনি আবারও ধরা পড়েন। ১৯৭৩ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেনা শাসনের সূত্রপাত ঘটে উরুগুয়েতে।  এরপর দেশটি ১২ বছর সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে যায়। এই পুরোটা সময় মুহিকা কারাগারে ‘সলিটরি সেল’-এ কাটান। ১৯৮৫ সালে উরুগুয়েতে সেনাশাসনের অবসান ঘটলে মুহিকা মুক্তি পান। 

কারামুক্তির পর গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যুক্ত হন মুহিকা। তুপামারোসের গণতন্ত্রপন্থিদের নিয়ে বামপন্থি জোট ব্রড ফ্রন্টে যোগ দেন। খুব দ্রুতই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন তিনি। তার জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে পুরোনো দিনের গেরিলা ভাবমূর্তি বড় অবদান রেখেছিল।

১৯৯৪ সালে উরুগুয়ের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের কাছাকাছি এসেও হেরে যায় ব্রড ফ্রন্ট। দুজন সাবেক তুপামারো নেতা ব্রড ফ্রন্ট থেকে জয়ী হন। এদেরই একজন হোসে মুহিকা। 

অবশেষে ২০০৫ সালে কলোরাডো ও ন্যাশনাল পার্টির জোটকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে ব্রড ফ্রন্ট। প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হন তাবারে ভাসকুয়েজ। হোসে মুহিকা হন পশুসম্পদ, কৃষি ও মৎস্য মন্ত্রী।

২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৯ সালে ব্রড ফ্রন্টের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিতে যান মুহিকা এবং ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। 

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাপী হোসে মুহিকার অনাড়ম্বর জীবনযাপন বেশ আলোচনায় আসে। তার জীবনযাপন ছিল খুবই সহজ, সাধারণ ও ভোগবাদবিরোধী।

রাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ বাসভবনে না থেকে শহরের বাইরে নিজের সাধারণ বাড়িতে স্ত্রী লুসিয়া টোপোলানস্কির সঙ্গে থাকতেন। তার স্ত্রী নিজেও একজন সাবেক গেরিলা ও রাজনীতিক। তাদের ঘরে কোনো গৃহকর্মী  ছিল না।

অনাড়ম্বর জীবনযাপনের কারণে সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে পরিচিত হন হোসে মুহিকা। তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘তারা বলে আমি নাকি সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট। না, আমি তা নই। দরিদ্র তারা যারা আরো বেশি চায়, কারণ তারা এক অন্তহীন দৌড়ে রয়েছে।’ 

মুহিকার বিরুদ্ধে কখনো দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠেনি। ২০২০ সালে মুহিকা রাজনীতি থেকে অবসরে যান। কিন্তু ততদিনে উরুগুয়ে এবং লাতিন আমেরিকার বামপন্থি রাজনীতিতে এক কিংবদন্তি চরিত্রে পরিণত হন তিনি। কিউবার কিংবদন্তি বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে অনেকে তুলনা করতেন হোসে মুহিকাকে।

যদিও ফিদেলের মতো সুদীর্ঘ বছর রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতায় ছিলেন না তিনি। তবুও স্বল্প সময়ের শাসনকালে উরুগুয়ের আপামর মানুষের মন জয় করতে পেরেছিলেন হোসে মুহিকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫