Logo
×

Follow Us

ফিচার

সিলেট সীমান্তে হেঁটে হেঁটে চার দিন

Icon

মহিউদ্দিন আল মুহিত

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১৮:১৫

সিলেট সীমান্তে হেঁটে হেঁটে চার দিন

ভাবছিলাম একটা হাইকিং ট্রিপ হলে কেমন হয়, তাই বেরিয়ে পড়লাম সিলেটের উদ্দেশে। সেখানকার সীমান্তবর্তী এলাকায় হেঁটে বেড়াব আমরা।

ভোরবেলাতেই পৌঁছে গেলাম সিলেট শহরে, সেখান থেকে মোটামুটি চার-পাঁচ দিন সময় নিয়ে সীমান্ত ধরে হাঁটতে হাঁটতে অদেখা সিলেটের ভাটি অঞ্চলের রূপের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। একই সঙ্গে জেলার তিন উপজেলার সঙ্গেও পরিচয় হবে।

সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সকাল সকাল রওনা হলাম দয়ার বাজারের দিকে। মোটামুটি দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত দয়ার বাজারে। হালকা চায়ের আড্ডা সেরে হাঁটা শুরু করলাম ধলাই নদীর পার হয়ে, ঘুরে দেখলাম ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের আশপাশের নির্জন এলাকা। মোটামুটি ঘণ্টা তিনেক হাঁটা শেষে দয়ার বাজার ফিরে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য উৎমা ছড়া। সেখানে সিএনজি অটোরিকশায় চেপে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল আধঘণ্টার একটু বেশি। 

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বয়ে আসা ঝিরি সিলেটে মূলত ছড়া নামে পরিচিত, এমনই কয়েকটি ছড়ার সঙ্গে আগামী কয়েক দিন আমরা পরিচিত হব। যার মধ্যে একটি হলো উৎমা ছড়া। উৎমা ছড়ায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর। 

পেটে কিছু দিয়ে শুরু করলাম সীমান্তের কাঁচা-পাকা সড়ক ধরে হাঁটাহাঁটি। মোটামুটি ক্লান্ত থাকায় আমরা ঠিক করলাম আজ বেশিদূর হাইকিং করব না। তুরং গ্রামেই রাত যাপন করে আগামীকাল থেকে শুরু হবে বাকি পথচলা।

তুরং গ্রামের মাঝে বয়ে গেছে তুরং ছড়া। ওই ছড়ার তীরে পুরো বিকেল চায়ের আয়োজন আর আড্ডা ছিল অসাধারণ। মোটামুটি গরমের মাঝে এক বিষণ্ন সুন্দর পূর্ণিমার মাঝে তুরং ছড়ার পাশে ক্যাম্পিং করে কেটে গেল তুরং গ্রামে আমাদের প্রথম রাত।

দ্বিতীয় দিন সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়লাম বিছানাকান্দির উদ্দেশে। ঠিক করলাম গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছানাকান্দি হয়ে পানথুমাই গ্রাম যাব। হাঁটতে হাঁটতে দেখতে শুরু করলাম ভাটি অঞ্চলের আগাম বর্ষার রূপ, মেঘালয়ের বুক ঝরে নেমে আসা জলধারায় সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল হয়ে ওঠে হাওর। 

হাইকিংয়ের মাঝে হঠাৎ আমাদের চোখে পড়ল একটা ছোট্ট দ্বীপ। হাওরের মাঝে দ্বীপটা যেন কচ্ছপের পিঠের মতো কয়েকটা গাছ আর ঘাসের চাদরে ঢেকে আছে। 

আমাদের হাঁটার পথটায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গিয়েছিল। যেখানে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা ছিল, দেরি না করে একটা নৌকা নিয়ে আমরা চলে গেলাম দক্ষিণের দ্বীপটার দিকে। সেখানটায় পৌঁছে আমরা ভাবতে থাকলাম পূর্ণিমায় আজ রাতে এখানটায় ক্যাম্পিং করলে কেমন হয়?

বেলা এখনো বাড়েনি। আমাদের হাইকিংয়ের এখনো তিন ভাগের এক ভাগও শেষ হয়নি, তবুও আমরা মনস্থির করলাম আজ রাত এখানেই থাকব। উত্তরে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড় আর চারদিকে হাওরের মাঝে আমরা এক অসাধারণ দিন কাটিয়ে দিলাম। 

হাইকিংয়ের তৃতীয় দিন সকালে একটা লম্বা হাঁটা দিব ঠিক করলাম। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম গোয়াইনঘাটের কাঁচা-পাকা পথ ধরে। আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম বিছানাকান্দির পাথরের রাজ্যে। ভারত সীমান্তের একদম কোলঘেঁষে অবস্থিত বিছানাকান্দি মোটামুটি জনপ্রিয় একটি পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম, এ যেন এক সবুজের সাম্রাজ্য, দক্ষিণে অরণ্যঘেরা পাহাড় আর উত্তরের বিস্তৃত সমভূমি, ভারত সীমান্তঘেঁষে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সীমান্ত সড়ক। 

আরেকটি ছড়ার দেখা মিলল। নাম কুলুম ছড়া। বিছানাকান্দি থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরত্ব। এরপর দুই পাশে বিস্তৃত চাষের জমির মধ্য দিয়ে যাওয়া কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম লক্ষ্মণ ছড়া। সময় লাগল আরো ২০ মিনিট। 

সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোর ভেতর দিয়ে আর কিছুটা দূর পেরিয়ে দেখা পেলাম পান্থমাই গ্রাম আর তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পান্থুমাই খালের মোটামুটি দুপুরের সূর্য মাথায় নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম পান্থুমাই ঝরনার কোলে। 

পান্থুমাই গ্রাম পেরিয়ে পরবর্তী যাত্রা শুরু হলো সিলেটের আরেক উপজেলা জৈন্তাপুরের উদ্দেশে। এই পথটা মোটামুটি হালকা যানবাহনের পথ থাকায় আমরা পান্থুমাই থেকে গ্রামের ভেতরের রাস্তা ধরে অটো করে চলে গেলাম হাজীপুর বাজার। মাঝে দেখতে পেলাম জাফলং হয়ে আসা পিয়াইন নদী। সেখান থেকে গেলাম জাফলং এবং তারপর চলে গেলাম কোলাহলমুক্ত মোকামপুঞ্জী। যেখানটায় মূলত বসবাস করে খাসিয়া সম্প্রদায়। মোকামপুঞ্জীজুড়ে রয়েছে বিস্তৃত চাবাগান আর সুপারির বাগান। 

মোকামপুঞ্জীতে ক্যাম্পিং করার চিন্তাভাবনা থাকলেও সেখানে থাকার সুযোগ হয়ে ওঠেনি, চলে গেলাম নলজুরী মাঠ। সেখানটায় এক নির্জন বিকেল কাটিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষের সহায়তায় নলজুরীর খালের পাশে একটা মাঠে ক্যাম্পিংরের ব্যবস্থা করে ফেললাম। আর সেখানেই রাত যাপন। 

সিলেট ভ্রমণের চতুর্থ দিন ঠিক করলাম ঘুরে দেখব জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালের আশপাশ। সকাল সকাল ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র গোছগাছ করে নাশতা সেরে রওনা হলাম লালাখালের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে খেয়া পার হয়ে খালের পাশ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। ধীরেসুস্থে চাবাগানের মাঝখানের পথ ধরে হাঁটলাম। তারপর যেখানে বাংলাদেশ শেষ হয়ে ভারতের শুরু, সেই জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে রওনা দিলাম। দিনটা লালাখালের স্বচ্ছ জলের পাশ ধরেই আমরা একটু একটু করে হেঁটে বেড়িয়েছি, বিশ্রাম নিয়েছি আর বেলা শেষে ফিরে আসি সিলেট শহরের দিকে, রাতে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রার মাধ্যমে শেষ হয় আমাদের সিলেট ভ্রমণ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫