
‘তুমি যদি না দেখা দাও, কর আমায় হেলা,/কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল বেলা।’ বিশ্বকবির ভাবনায় বর্ষা এমনই আবেগ বিরহের কাল। যদিও ‘বর্ষার চিঠি’তে বিশেষ এই ঋতুটিকে বাল্যকালের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। তার মতে, যৌবনের যেমন বসন্ত, বার্ধক্যের যেমন শরৎ, বাল্যকালের তেমনি বর্ষা।
বর্ষাকাল অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে অবসরের আমেজে বাঙালির মনকে স্মৃতিকাতরতায় ডুবিয়ে রাখে। বৃষ্টির জলে গা ভিজিয়ে কেউ আবার খুঁজে বেড়ায় শুদ্ধতা। শহুরে জীবনে সবুজ প্রকৃতি কিংবা বর্ষার আসল রূপ দেখা না গেলেও মানুষের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব ঠিকই পড়ে। দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কেউ কেউ মেতে ওঠেন খিচুড়ি-ইলিশের রসনায়। কেউ যেমন গান শুনেই পার করে দেয় সকাল-সন্ধ্যা, আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও হয়ে ওঠে সময় কাটানোর অন্যতম অনুষঙ্গ। বিশেষ এই ঋতুতে মানুষের চলাফেরা, পোশাক, ফ্যাশন ও খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। অবসর অথবা কর্মব্যস্ততা যা-ই থাকুক, বর্ষায় চলতে হয় বৃষ্টির মন বুঝেই। তা না হলে এই ভিজে বরষা উপভোগ্য হবে কী করে?
সাজপোশাকে বর্ষার ছোঁয়া আনার পাশাপাশি ঘরের কোণেও বর্ষা যাপনের আয়োজন করতে পারেন। এই ঋতুতে দরজার সঙ্গে ঝুলিয়ে দিন উইন্ডচাইম। ঝোড়ো বাতাসে উইন্ডচাইমের শব্দ বাড়িতে আনবে বর্ষার আমেজ। বর্ষায় জানালার ধারে লতানো গাছ লাগিয়ে দিতে পারেন। বারান্দার ছোট ফুলবাগানে কিংবা জানালার সামনে দুটি চেয়ার বসিয়ে দিন। রিমঝিম বৃষ্টিতে সেই জানালার সামনে বসে পড়তে পারেন পছন্দের কোনো বই কিংবা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শুনতে পারেন গান।
বর্ষা যাপন মানে প্রকৃতির রূপান্তরকে ঘরের ভেতর থেকে অনুভব করা। কখনো কখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার অনুভূতিও বর্ষার এক দারুণ অভিজ্ঞতা। বৃষ্টির দিনের স্নিগ্ধতা, একাকিত্ব অথবা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো-সবই বর্ষাকালকে বিশেষভাবে উপভোগ্য করে তোলে।
আর শুধু ঘরেই কেন, বর্ষাকে উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতির সান্নিধ্যেও। ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার আশপাশের প্রকৃতিঘেরা কোনো জায়গা থেকে। বৃষ্টিভেজা বিকেলে রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে জুড়িয়ে যাবে চোখ।