Logo
×

Follow Us

ফিচার

চাণক্যের সবচেয়ে বিশ্বস্ত গুপ্তচর

Icon

জুয়েল নাগ

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৪:১১

চাণক্যের সবচেয়ে বিশ্বস্ত গুপ্তচর

গোয়েন্দা বা গুপ্তচর বৃত্তি সাম্প্রতিক সময়ে একটি আলোচিত বিষয়। সদ্যঃসমাপ্ত ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে ব্যাপক গোয়েন্দা তৎপরতার বিষয়টি গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে আজঅব্দি যে দেশের গুপ্তচররা দক্ষ ও তথ্য সরবরাহে নির্ভুল, সেই দেশ যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে অনেকটাই এগিয়ে থাকে। 

গুপ্তচর বৃত্তির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ‘চাণক্য’র কথা আসবেই। চাণক্যের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন। গুপ্তচরবৃত্তিকে চাণক্য শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ চাণক্য পরিচালিত তেমনই এক দুর্ধর্ষ গুপ্তচরের গল্প শোনাব। 

চন্দ্রগুপ্ত তখন সদ্য মগধের সিংহাসনে বসেছেন। কিন্তু নন্দ বংশের অবশিষ্ট অনুগামীরা তখনো গোপনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। চাণক্য জানতেন, মৌর্য সাম্রাজ্য রক্ষা করতে হলে তাকে ছায়ার মতো চলতে হবে। চিত্রদাস ছিল চাণক্যের সবচেয়ে বিশ্বস্ত গুপ্তচর। কিন্তু লোকে তাকে চিনত এক ভবঘুরে সন্ন্যাসী হিসেবে। মাটিতে মাখামাখি শরীর, হাতছাড়া ধুতি, কপালে তিলক, মুখে সব সময় শ্লোকÑএই ছিল তার বেশভূষা। এই সরল বেশভূষার আড়ালে ছিল এক তীক্ষè মস্তিষ্ক, প্রশিক্ষিত যোদ্ধা, আর দক্ষ বিষ-বিশারদ।

একদিন চাণক্য তাকে পাঠালেন পাটলিপুত্রের অদূরে এক গ্রামে, চাণক্যের কাছে কোনোভাবে খবর এসেছিল সেই গ্রামে নন্দবংশের এক গুপ্ত সমিতি সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চিত্রদাস সেখানে ‘অন্ধ ভবিষ্যদ্বক্তা’র ছদ্মবেশে আশ্রয় নিল। গ্রামের মানুষ তাকে ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে লাগল এবং তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতে থাকল। কারণ সে এমন কৌশলে ভবিষ্যদ্বাণী করত, যাতে করে গ্রামবাসী আশার আলো দেখতে পেত। এক রাতে চিত্রদাস গ্রামের মন্দিরে অবস্থান করছিল। গভীর রাতে মন্দিরের পাশে কিছু মানুষের উপস্থিতি টের পেল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেছিল, ‘রাজ্য আবার আমাদেরই হবে। রাজনন্দের আদেশে পাটলিপুত্রে আগুন লাগাতে হবে ১০ দিনের মধ্যেই।’ চিত্রদাস পুরো আলোচনাটি শুনতে পেলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সংকেত চাণক্যকে খবর পাঠাতে উদ্যত হলেন। চিত্রদাস নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ধোঁয়ার মাধ্যমে চাণক্যকে সংকেত পাঠালেন, যা ছিল এক প্রাচীন গুপ্ত বার্তাব্যবস্থা। এ সংকেতের মাধ্যমে চিত্রদাস শুধু একটি বার্তা দিয়েছেন, ‘অগ্নি আরম্ভ’। চাণক্য বুঝলেন বিপদ আসন্ন। তিনি আগেই রাজধানীতে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করে রেখেছিলেন। চিত্রদাস এক রাতে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের মদের সঙ্গে ধুতরা বিষ মিশিয়ে দিলেন। অচেতন হতেই মৌর্য রাজার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল তাদের ওপর। পরদিন সকালে রাজপ্রাসাদে সংবাদ এলোÑ‘বিপ্লব দমন, রাজ্য নিরাপদ। আগুন নিভে গেছে।’ এ সাফল্যের পরও চিত্রদাস অদৃশ্যই রইলেন, যেমন আগে ছিলেন। চিত্রদাস কখনোই রাজা চন্দ্রগুপ্তের সামনে আসেনি।

চাণক্যের গুপ্তচররা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে থাকতেন। সমাজের কাছে তাদের পরিচয় ছিল সাধারণ মানুষ, সন্ন্যাসী, ব্যবসায়ী, নর্তকি, এমনকি পতিতা। কিন্তু তাদের সত্যিকার পরিচয় জানতেন কেবল চাণক্য। এভাবে চাণক্য রাজা চন্দ্রগুপ্ত এবং তার সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন সংকট থেকে রক্ষা করেছেন এবং উঠে এসেছেন ইতিহাসের পাতায়। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫