Logo
×

Follow Us

ফিচার

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন : প্রয়োজন যত্ন ও সচেতনতা

Icon

তাবাস্সুম প্রীতি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৪:৫৬

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন : প্রয়োজন যত্ন ও সচেতনতা

তাসনুভার দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর থেকেই পরিবারের সবাই তার আচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছে-সন্তানকে খাওয়ানোর প্রতি অনীহা, অযথা রেগে যাওয়া, আতঙ্কগ্রস্ত থাকা ইত্যাদি। তাসনুভার স্বামী অফিসের এক সহকর্মীর কথায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। আর তখনই প্রথম তিনি ও তার পরিবার পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতা বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত হয়। 

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কেন হয়? : এটি মূলত এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা সন্তান প্রসবের পরই দেখা দেয়। শিশুর জন্মের পর বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন, পারিপার্শ্বিক প্রভাব ও মানসিক বিভিন্ন বিষয় এক হয়ে এ ধরনের সমস্যার তৈরি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েরা এ সময়ে একটু খিটখিটে আচরণ করে। খুব ছোট কারণে রেগে যাওয়া বা কান্নাকাটি করা, একাকী থাকা ইত্যাদি। সাধারণত এই সমস্যাগুলোকে মায়ের আচরণগত সমস্যা হিসেবে ভেবে নিই। অথচ এই পরিবর্তনগুলো মূলত সন্তান জন্মদানজনিত শারীরিক ধকল, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এবং হরমোনের বিভিন্ন জানা-অজানা প্রভাবের কারণেই ঘটে থাকে। এসব সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়ে মাকে ভয়াবহ আত্মগ্লানি ও বিষণ্নতা গ্রাস করে। বিষয়গুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে কিংবা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। 

কীভাবে বুঝবেন বিষণ্নতায় ভুগছেন? : প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতায় মা আক্রান্ত কি না, বোঝার জন্য কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-সহজেই বিরক্ত হওয়া বা অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা, দুশ্চিন্তা করা, কান্না বা কান্নার ভাব হওয়া, অকারণে রেগে যাওয়া, দুঃখ বা অপরাধবোধের মতো নেতিবাচক অনুভূতি, পছন্দের কাজগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, ঘুমের সমস্যা হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ, খাবারে অনীহা, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা, আক্রমণাত্মক মানসিকতা তৈরি হওয়া, নিজের বা বাচ্চার ক্ষতি করতে চাওয়ার প্রবণতা, ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখা ইত্যাদি। এসবের বাইরেও মায়ের মধ্যে অন্য কোনো পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে।

কারণ : এ জন্য নানা ধরনের কারণ কাজ করতে পারে। যেমন-সন্তান পালনের মানসিক চাপ, পরিবার ও সামাজিক সহায়তা না পাওয়া, আর্থিক অসচ্ছলতা, অপরিকল্পিত অথবা অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ, বিবাহপূর্ব গর্ভধারণ, আগের বিষণ্নতার ইতিহাস থাকলে, বৈবাহিক সম্পর্কে টানাপড়েন, কর্মজীবী মায়ের চাকরি হারানোর মতো দুশ্চিন্তা, আদর্শ মা না হতে পারার হীনম্মন্যতায় ভোগা, সাম্প্রতিক তালাক বা বিচ্ছেদ ইত্যাদি।

কী করবেন 

*প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতার বিষয়টি কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। মেডিটেশন আর সাইকোথেরাপির মাধ্যমে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন দূর করা সম্ভব। মনে রাখবেন, এ সমস্যা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য। 

*একেবারে ঘরের কোণে বসে না থেকে মাঝে মাঝে শিশুকে নিয়ে ছাদে বা বারান্দায় খোলা বাতাসে, সূর্যের আলোতে গিয়ে বসুন। সন্তানকে নিয়ে সূর্যালোক উপভোগ করুন। এ সময়টা সন্তানের সঙ্গে একান্তই আপনার। 

*শিশুর জন্মের পর নানাজন নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন। এ নিয়ে নিজেকে অযোগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই। শিশুর ভালো-মন্দ বিষয় নিয়ে পর্যাপ্ত ধারণা নেই এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। সন্তানের জন্য আপনি মঙ্গল কামনা করেন এই বিশ্বাসটিই যথেষ্ট।

*বিশ্রামের জন্য সময় ভাগ করে নিন। প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু সময় বের করার চেষ্টা করুন। বিশ্রামের এ সময়টিতে শিশুকে বড় কারো দায়িত্বে দিয়ে রাখুন।  

*ব্যস্ত সময়ের মধ্য থেকেও নিজের জন্য আলাদা একটু সময় বের করুন। সময় নিয়ে আরাম করে গোসল করুন। সব সময় চেষ্টা করুন পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি কাপড় পরতে। হালকা একটু সাজও মনকে প্রফুল্ল রাখতে সহায়তা করবে। 

*একা একা না থেকে পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটান।

প্রসূতি মায়ের পরিবার-পরিজনদেরও কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন-নতুন মায়ের বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সহনশীল ও আন্তরিক হতে হবে নবজাতকের বাবাকে। এ সময় মায়ের হঠাৎ পরিবর্তিত আচরণগুলোকে ধৈর্য সহকারে মেনে নেওয়া এবং পরিবারের  অন্যদের এ বিষয়ে সহনশীল হওয়ার জন্য তাদের বোঝাতে হবে। সন্তান প্রসবের সময় যে শারীরিক ধকল যায়, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য মায়ের প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম। এ সময় যতখানি সম্ভব মাকে বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া মাকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। তাকে যতখানি পারা যায়, পরিবারের সবাই মিলে সঙ্গ দিতে হবে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫