
অর্থ সঞ্চয়ে সবাই পটু নন। কেউ যেমন উপার্জনের অর্থ গুনে গুনে সঞ্চয়ের ভান্ডারে তোলেন, তেমন অনেকেই উপার্জনের সামান্যটুকু মাসের শেষে হাতে রাখতে পারেন না। তারা সঞ্চয়ের মূল্য বোঝেন না, তা নয়। কিন্তু খরচ করার সময় আর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। অনর্থক খরচ করার ওই অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব জাপানি সঞ্চয় পদ্ধতি ‘কাকিবো’র সাহায্যে। শত বছরেরও বেশি পুরোনো ওই নীতি শুধু খরচেই রাশ টানে না, পাশাপাশি অর্থের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দেয়। কাকিবোর মূল মন্ত্র হলো খরচে অতিরিক্ত কড়াকড়ি না করেও সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা।
কাকিবো কী? : কাকিবো শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো ‘সংসারের খরচের খাতা’। এমন খাতা ছোট থেকে বাড়িতে দেখে বড় হয়েছেন অনেকেই। শুধু তা-ই নয়, হিসাব রাখার জন্য কাকিবো পদ্ধতিতে কলম ও খাতাই ব্যবহার করতে বলা হয়। ১৯০৪ সালে সঞ্চয়ের ওই পদ্ধতির কথা বলছিলেন জাপানের প্রথম নারী সাংবাদিক হানি মোতোকো। তার যুক্তি ছিল, খাতা-কলমে অর্থব্যয়ের হিসাব রাখলে খরচ সম্পর্কে সচেতনতা অনেক বেশি বাড়ে। একই সঙ্গে জমানোর জন্য প্রতি মাসে নিজেকে চারটি প্রশ্নও করতে বলা হয় কাকিবো পদ্ধতিতে।
চার-প্রশ্ন : ১. আমার কাছে কত টাকা আছে? অর্থাৎ আপনার প্রতি মাসের বা বার্ষিক উপার্জন কত।
২. আমি কতটা জমাতে চাই? আপনি প্রতি মাসে বা বছরে কত জমাবেন বলে স্থির করেছেন। ৩. আমি কতখানি খরচ করছি? সাধারণত মাসে কোন কোন খাতে কতটা খরচ হয়, তার একটি তালিকা তৈরি করা। ৪. আরো ভালোভাবে সঞ্চয় করবেন কীভাবে? কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ কমিয়ে আরো বেশি সঞ্চয় সম্ভব, তা দেখা।
কীভাবে কাকিবো সঞ্চয়ে সাহায্য করে
* কাকিবো যেহেতু হাতে লিখে হিসাব করতে বলে, তাই কীভাবে কতটা খরচ হচ্ছে, তা অনেক গভীরভাবে মনে থেকে যায়।
* কাকিবোয় মাসের খরচকে চার ভাগে ভাগ করতে বলা হয়। ওই চার ভাগে খরচ ভাগ করে নিলে অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
* বাঁচার জন্য জরুরি যেমন-খাবার, ওষুধ, ত্বকের পরিচর্যা, পরিচ্ছন্নতার জিনিসপত্র, বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, ফোনের বিল ইত্যাদি।
* বিকল্প খরচ, অর্থাৎ যা না হলে খুব অসুবিধা হবে না-মনোরঞ্জন, রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া, কেনাকাটা।
* বাঁচার জন্য আত্মোন্নতির প্রয়োজন। প্রয়োজন নিজের ভাবনায় শাণ দেওয়া। বই, শিল্প, গানবাজনা ইত্যাদির খরচ।
* হঠাৎ কোনো অসুখ হলে বা জরুরি কোনো প্রয়োজনের খরচও থাকে। সে সবের জন্যও আলাদা অর্থ সঞ্চয় করতে হবে।
* হঠাৎ কিছু দেখে পছন্দ হয়ে গেলেই তা কিনে ফেলার মতো মানসিকতায় রাশ টানে কাকিবো। যেহেতু খরচের প্রতিটি খাত আগে থেকেই আলাদা করা থাকে, তাই অকারণ খরচের আগে ভাবতে হয়। এতে হঠাৎ এটা-সেটা কিনে ফেলার মানসিকতাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।