
উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি ও ডালপালা হাওরের তলদেশে জমতে থাকে। ধীরে ধীরে এগুলো কাদামাটির নিচে চাপা পড়তে থাকে। এভাবে বছরের পর বছর মাটির নিচে থাকার ফলে একসময় এগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে পরিণত হয়। গাছের এসব অংশ মাটির নিচে পচে কালো রং ধারণ করে এবং নরম অবস্থায় থাকে। কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে সাত থেকে আট ফুট মাটি খুঁড়লেই দেখা মেলে স্থানীয় ভাষায় ‘কালো মাটি’ খ্যাত এই জীবাশ্ম জ্বালানির। এ মাটি দেখতে কিছুটা কয়লার মতো। কিন্তু এই কালো মাটি কয়লার মতো শক্ত নয়, কিছুটা নরম। কালো মাটির সঙ্গে অনেক সময় গাছের আস্ত কাণ্ড এবং শাখা-প্রশাখাও পাওয়া যায়। স্থানীয়রা শুষ্ক মৌসুমে ‘কালো মাটি’ সংগ্রহ করেন। এ মাটি সংগ্রহ করার পর সূর্যের আলোতে ভালোভাবে শুকিয়ে জ্বালানির উপযোগী করা হয়, যা সারা বছরের জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করেন স্থানীয়রা। দৈনন্দিন রান্নার কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি কাঠের সংকট থেকে হাওরাঞ্চলের গৃহিণীদের অনেকটাই মুক্তি দিয়েছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, শান্তিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার নদী, হাওর ও বিলে এই মাটি পাওয়া যায়। জেলার শান্তিগঞ্জে উপজেলার কুমড়ি আইল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ছোটবেলায় এই এলাকায় অনেক গাছপালা দেখেছি, আমাদের গ্রামের মুরব্বিদের কাছে শুনেছি, এখানে জঙ্গল ছিল, এখন কিছুই নেই। সাত থেকে আট হাত মাটি খুঁড়ে একই জায়গায় কালো মাটি পাচ্ছি। এগুলো জ্বালানি হিসেবে সাধারণ লাকড়ি থেকে ভালো জ্বলে আর রান্নাও হয় দ্রুত।’ একই গ্রামের বাসিন্দা দেবেস দাস জানান, গ্যাসের মতো এই কালো মাটিতে আগুন জ্বালিয়ে দিলেই হয়, দ্রুত সময়ে রান্না হয়ে যায়। এই মৌসুমে আরো ১৫ থেকে ২০ দিন কাজ করতে পারলে এক বছরের জন্য জ্বালানির চিন্তা করতে হবে না। স্থানীয় আরেকজন বাসিন্দা স্বপ্না দাস জানান, যারা পরিশ্রম করতে পারেন, তারাই এই কাজ করছেন। কালো মাটি তোলার সময় খুবই নরম থাকে। এগুলো টুকরা টুকরা করে রোদে শুকাতে দিই। ভালো রোদ হলে এক সপ্তাহে শুকিয়ে যায়, আর না হলে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে শুকাতে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন সালেহীন চৌধুরী। তিনি বলেন, কালো মাটি আসলে এক ধরনের কয়লা। যার মধ্যে কার্বনের পরিমাণ বেশি। প্রতি বছরই হাওরাঞ্চল থেকে মাটি খুঁড়ে কালো মাটি উত্তোলন করে হাওর পারের বাসিন্দারা। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এই কয়লা উত্তোলন পানি ও পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।