
বাংলাদেশের বর্ষা শুধুই কাদা আর বৃষ্টি নয়-এ সময় প্রকৃতি তার সবচেয়ে সবুজ, রহস্যময় ও মনভোলানো রূপে ধরা দেয়। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, পাহাড়-ঝরনা সব কিছুই হয়ে ওঠে মোহনীয়। যারা প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া খুঁজে বেড়ায়, তাদের জন্য বর্ষা মানেই এক অন্য রকম ভ্রমণের মৌসুম।
এই ঋতুতে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে নিকলি হাওর। কিশোরগঞ্জ জেলার এই বিস্তীর্ণ জলরাজ্যে বর্ষায় নেমে আসে এক অপূর্ব নীল-সবুজ জগৎ। নৌকায় বসে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির বুকে ভেসে চলার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে জীবনের অন্যতম সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। নিকলিতে ভাসমান রেস্তোরাঁ, হাওরপারের গ্রাম, সূর্যাস্ত কিংবা হালকা বৃষ্টিতে নৌভ্রমণ সব মিলিয়ে বর্ষাকালীন ভ্রমণের এক নিখুঁত চিত্র।
এই মৌসুমে ঘুরে আসা যেতে পারে সিলেটের জৈন্তাপুর, বিছানাকান্দি আর গোয়াইনঘাট। টিলার গায়ে বৃষ্টির ছোঁয়া, ঝরনার উচ্ছ্বাস, আর নদীর উথালপাথাল জল একসঙ্গে উপভোগ করা যায় এখানে।
চট্টগ্রামের রাঙামাটি বা খাগড়াছড়িও হয়ে উঠতে পারে আদর্শ গন্তব্য। কাপ্তাই লেকের নীল জল আর মেঘে ঢাকা পাহাড় বর্ষায় যেন আরো রহস্যময় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওর, সাজেক, নাফাখুম ঝরনা কিংবা নেত্রকোনার বিজয়পুরের নীল জলাভূমিও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয়।
বর্ষায় ভ্রমণে বের হওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতি খুব জরুরি। সঙ্গে ছাতা, রেইনকোট ও দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন পোশাক রাখুন। স্যান্ডেল বা ওয়াটার প্রুফ জুতা ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। হঠাৎ বৃষ্টির হাত থেকে মোবাইল, ক্যামেরা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাঁচাতে পানিরোধী ব্যাগ কাজে দেবে। যাদের অ্যালার্জি বা সর্দি-কাশির সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখবেন।
এ সময় ঘুরতে যাওয়ার বাড়তি কিছু সাবধানতা প্রয়োজন। রাস্তার অবস্থা ও আবহাওয়া পূর্বাভাসের দিকে খেয়াল রেখে তবেই বেরিয়ে পড়ুন। পাহাড়ি এলাকায় অতিবৃষ্টিতে ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে। যেসব এলাকায় ভূমিধস বা বন্যার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। নৌভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই লাইফজ্যাকেট ব্যবহার করতে হবে।
বর্ষা একদিকে কষ্টকর মনে হলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি বাংলার প্রকৃতিকে নতুন রূপে আবিষ্কারের সময়। একটু পরিকল্পনা আর সতর্কতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই দেখা মিলবে ভেজা বাংলার অনন্য সৌন্দর্য, যা বছরের অন্য সময় দেখা যায় না।