Logo
×

Follow Us

ফিচার

উচিতপুর কত দূর?

Icon

সঞ্জয় সরকার

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪২

উচিতপুর  কত দূর?

চারপাশে অথৈ জলরাশি। ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। সাগরসদৃশ সেই জলরাশির মাঝখানে একটি পাকা সেতু। কিন্তু দূর থেকে মনে হয় পানির ওপর ভাসমান এক বিশাল জাহাজ। আর কাছেই বিশাল নৌবন্দর। হাজারও যাত্রী আর মাঝিমাল্লার হাঁকডাক। ভ্রমণপিপাসুরা সেখানে গেলে কক্সবাজারের সমুদ্রপারের সঙ্গে মিল পান। তাই ‘উচিতপুর’ নামক এই জায়গাটিকে এখন অনেকে বলেন ‘মিনি কক্সবাজার’।

উচিতপুর মূলত নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলের একটি জায়গা। বলা যায় হাওরের পার। মদন-খালিয়াজুরী সাবিমার্জিবল (ডুবন্ত) সড়কের মাঝখানে বালই নদীর পারে অবস্থিত এই জায়গাটি মদন সদর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত। আর জেলা সদর থেকে এটির দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। দেড় ঘণ্টায় অনায়াসে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে উচিতপুর থেকে হাওরাঞ্চলের খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও মদনের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ট্রলার (ইঞ্জিচালিত নৌকা) যাতায়াত করে। এ কারণে বর্ষা এলেই জায়গাটি জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এটির কোনো প্রাণ থাকে না।

 নেত্রকোনা বা মদন সদর থেকে উচিতপুরে পৌঁছলে প্রথমেই যে দৃশ্যটি চোখে পড়ে, তা হলো বিশালাকারের নৌকাঘাট বা নৌবন্দর, যেখানে সারাক্ষণ নোঙর করা থাকে শত শত ট্রলার (ইঞ্জিন নৌকা)। এসব জলযানকে ঘিরে ভোর থেকে রাত ৮টা অবধি লেগে থাকে দূর-দূরান্তের গন্তব্যগামী যাত্রীদের ভিড়। আর শুধু যাত্রীরাই না, হাওরের নয়নাভিরাম 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকও ছুটে আসেন উচিতপুরে। তাই যাত্রী আর পর্যটকদের আনাগোনাকে পুঁজি করে স্থানীয়রা সেখানে গড়ে তুলেছেন বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট, কফি হাউস ও গাড়ির গ্যারেজ। এর কোনোটি পানির ওপরে, আবার কোনোটি হাওরের পারে। সরকারিভাবেও নির্মাণ করা হয়েছে একটি রেস্টহাউস।

উচিতপুর ঘাটে দাঁড়িয়ে উত্তর, পূর্ব বা দক্ষিণের যেকোনো দিকে তাকালেই চোখে পড়ে দিগন্ত বিস্তৃত হাওর। অপলক তাকিয়েও এর সীমা-পরিসীমা বোঝা যায় না। মনে হয় না যে, সাগরের সঙ্গে এই হাওরের কোনো অমিল আছে। দূরে ঘন-কালো মেঘের মতো দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামগুলোকে মনে হয় একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ওখানে দাঁড়ালেই বর্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা হাওরজীবন সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। ‘লিলুয়া বাতাস’ এর দিকে একটু কান পাতলেই শোনা যায় ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের গর্জন। ঘাটের পাকা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ালেই স্বচ্ছ জলে ভেজানো যায় দুই পা। মন তখন অপার আনন্দে নেচে ওঠে। চাইলে উচিতপুর থেকে ভাড়ায়চালিত ট্রলার নিয়ে হাওরের মাঝখানেও যাওয়া যায়। কূলহীন হাওরের মাঝে গেলে খুব কাছ থেকে দেখা যায় মাছ ধরার দৃশ্য। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকা মাঝিদের ছোট ছোট নৌকাগুলোকে মনে হয় শিল্পীর আঁকা ছবি। বর্ষায় ভরা পূর্ণিমার রাতে উচিতপুরে গেলে ফিরে আসতে মন চায় না কারো।

উচিতপুর ঘাট বা নৌবন্দর থেকে মাত্র আধকিলোমিটার এগোলেই বালই সেতু। ট্রলারে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। সেতুটির দুই পাশে সড়ক থাকলেও বর্ষাকালে তা পানির নিচে থাকে। এ কারণে সেতুটিকে আর সেতু মনে হয় না। মনে হয়, অথৈ জলের ওপর ভাসমান কোনো দৃষ্টিনন্দন জাহাজ। আর সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কগুলোকে মনে হয় সি-বিচ। 

প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসছেন উচিতপুরে। বলে রাখা ভালো, উচিতপুরের এ সৌন্দর্য কেবল বর্ষাতেই অবলোকন করা যায়। শুকনো মৌসুমে অথৈ জলের দেখা মিলে না। তখন উচিতপুরের হাওর হয়ে ওঠে সবুজ ফসলের মাঠ। 

উচিতপুরে রাত যাপনের কোনো সুবিধা নেই। তবে মদন সদরে একটি ডাকবাংলো আছে। তা ছাড়া জেলা সদরেও আছে বেশ কিছু হোটেল। একটু ভালোভাবে থাকতে চাইলে জেলা সদরে থাকাই ভালো। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, ঝড়বাদলের দিনে উচিতপুর ও আশপাশের হাওর অশান্ত হয়ে ওঠে। ঢেউয়ের তর্জন-গর্জনে সৃষ্টি হয় এক ভয়াল পরিবেশ। ওই সব দুর্যোগপূর্ণ দিনে হাওরে নৌকা ভ্রমণ না করাই ভালো। আর সাঁতার না জানলে প্রত্যেকের লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়া উচিত।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫