Logo
×

Follow Us

ফিচার

ইতিহাসের পাতায় স্কুলে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা

Icon

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৫১

ইতিহাসের পাতায় স্কুলে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা

প্রতীকী ছাবি।

ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে সকালটা আর পাঁচটি দিনের মতোই ছিল। ক্লাস চলছিল, কেউ হয়তো পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে বসে, কেউ জানালার ধারে স্বপ্ন আঁকছিল। হঠাৎ এক বিকট শব্দ, আকাশ থেকে একটি উড়োজাহাজ যেন ছিঁড়ে পড়ল মাটিতে! চোখের পলকে বদলে গেল সব। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-সেভেন বিজিআই প্রশিক্ষণ জেট বিধ্বস্ত হলো স্কুল ভবনের সামনে। এতে এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, আহত হয়েছে অনেকেই।

ঘটনাটি বিশ্ব ইতিহাসের ঠিক এমনই কিছু হৃদয়বিদারক মুহূর্তের ধারাবাহিকতায় আরেকটি সংযোজন। যখন শিশুদের নির্ভরতার স্থান স্কুলই পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে।

আসুন জেনে নিই পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ঘটে যাওয়া সেই সব মর্মান্তিক ঘটনার কথা।

১৯৫৯-ওকিনাওয়া, জাপান : শিশুদের ওপর যেদিন ভেঙে পড়েছিল আকাশ

৩০ জুন ১৯৫৯। জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপ। গ্রীষ্মের এক সকালের মতোই স্বাভাবিক ক্লাস চলছিল মিয়ামোরি এলিমেন্টারি স্কুলে। হঠাৎই আকাশ থেকে ছুটে এলো আমেরিকান বিমানবাহিনীর একটি এফ-১০০ সুপার স্যাবর যুদ্ধবিমান। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা গিয়ে বিধ্বস্ত হয় স্কুলের মূল ভবন ও আশপাশের ঘরবাড়ির ওপর।

দুর্ঘটনায় ১১ শিশু ও ৬ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়, আহত হয় দুই শতাধিক। পরে দুর্ঘটনাজনিত আঘাতে আরো একজন মারা যায়। শিশুরা তখনো জানত না, যুদ্ধ শেষ হলেও কখনো কখনো আকাশ থেকেই আসে মৃত্যু। হঠাৎই আকাশ থেকে ছুটে এসেছিল এফ-১০০ সুপার স্যাবর যুদ্ধবিমান।

১৯৯০-বোলোনিয়া, ইতালি : জেট ঢুকে পড়েছিল ক্লাসরুমে

৬ ডিসেম্বর ১৯৯০। ইতালির বোলোনিয়া শহরে অবস্থিত একটি স্কুল, ইনস্তিতুতো সালভেমিনি। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে ছাত্ররা ক্লাসে বসে আছে। পাশেই প্রশিক্ষণ চালাচ্ছিল ইতালীয় বিমানবাহিনীর একটি এরমাক্কি এমবি-৩২৬ জেট। হঠাৎ ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় এবং পাইলট ইজেক্ট করলেও বিমানটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে গিয়ে সরাসরি স্কুল ভবনের ওপর পড়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ১২ শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয় ৮৮ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়ে যায় বইখাতা, রং-পেন্সিল আর অসমাপ্ত স্বপ্ন।

১৯৬১-হোলতাহেইয়া, নরওয়ে : স্কুলভ্রমণ হয়ে উঠল মৃত্যু যাত্রা

৯ আগস্ট ১৯৬১। নরওয়ের ল্যাফ্রাঙ্ক সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে একটি ভিকার্স ভাইকিং বিমান স্কুলভ্রমণে যাচ্ছিল। রাস্তায় ঘন কুয়াশা, খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি হোলতাহেইয়া পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়।

এই দুর্ঘটনায় ৩৪ ছাত্র ও ৩ শিক্ষক নিহত হন। এমনকি উদ্ধারকারীরা প্রথমে মৃতদেহগুলো খুঁজেও পায়নি কুয়াশা ও দুর্গম ভূ-প্রকৃতির কারণে। নরওয়ের ইতিহাসে এটিকে স্কুলশিক্ষার্থী নিহতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়।

১৯৯১-পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র : প্লে-গ্রাউন্ডে ধসে পড়ল আকাশ

৪ এপ্রিল ১৯৯১। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিয়ন এলিমেন্টারি স্কুল। ক্লাস চলছে, বাচ্চারা কেউ কেউ হয়তো খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে। আকাশে তখন দুটি বিমান, একটি পাইপার অ্যারোস্টার ও অন্যটি বেল ৪১২ হেলিকপ্টার। দুটোরই মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। 

দুটোই নিচে স্কুলের ওপর পড়ে, ঘটনাস্থলে দুজন প্রথম-গ্রেডের ছাত্রী নিহত হয়, আহত হয় আরো কয়েকজন শিশু ও কর্মী। খেলাধুলার মাঠের যে জায়গায় প্রতিদিন চিৎকারে মুখরিত থাকত আকাশ, সেদিন সেখানে নেমে এসেছিল নিঃশব্দ কান্না।

শেষ কথা

উত্তরার ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কেবল আকাশের যাত্রী নয়, মাটিতে বসবাসকারী নিরাপদ মানুষগুলোর প্রাণও বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিতে পারে। শিশুরা যেখানে স্বপ্ন দেখে, শেখে, ভবিষ্যৎ গড়ে, সেই স্থান যদি হয়ে ওঠে ধ্বংসের কেন্দ্র, তবে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

জীবনের প্রতিটি আকাশে যেন নিরাপত্তার ছাতা ছড়িয়ে থাকে, এটাই হোক আমাদের সবার চাওয়া।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫