
সুপারমার্কেটে মানুষ নানা কিছু খুঁজে পায়। তাজা ফল-মূল, পোশাক বা গৃহস্থালির জিনিসপত্র; কিন্তু একটি বিশাল পাথর? সেটি নিশ্চয়ই কারো কল্পনায়ও আসে না। অথচ এস্তোনিয়ার একটি সুপারমার্কেট ঠিক এমনই এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সাক্ষী।
যেখানে একটি বিশালাকার পাথর রয়েছে। যার পরিধি ২২ মিটার ও উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার (এর একটি অংশ মাটির নিচে)। এস্তোনিয়ার ছোট্ট শহর হাবনিম। শহরটির ভিমসি শপিং সেন্টারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক দৈত্যাকার প্রাকৃতিক পাথর, যেটা হাজার বছরের পুরোনো।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই শপিং সেন্টারের নির্মাণকাজ চলার সময় হঠাৎ করেই বের হয় এই পাথর। খননকাজ করতে গিয়ে মাটির নিচ থেকে উঠে আসে এক বিশালাকার শিলা। যার পরিধি ২২ মিটার আর উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার। অডিটিসেন্ট্রাল ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রথমে নির্মাতা কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় এই বিশাল পাথরটি উঠিয়ে ফেলে কাজ এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু স্থানীয়দের প্রতিবাদে সেই সিদ্ধান্ত থেমে যায়। তারা জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি শুধু একটি পাথর নয়, এটি ইতিহাসের অংশ, যা নষ্ট করা একেবারেই উচিত নয়।’ পরে ভূতত্ত্ববিদরা জানান, এটি একটি ‘অ্যারাটিক বোল্ডার’। এটি এক ধরনের ভ্রাম্যমাণ শিলা, যা সংরক্ষণের উপযোগী।
অ্যারাটিক বোল্ডার হলো এমন এক ধরনের পাথর, যা হিমবাহের দ্বারা খণ্ডিত হয়ে বহুদূর পাড়ি দিয়ে এক নতুন স্থানে এসে জমে যায়। এরা অনেক সময় স্থানীয় ভূ-গঠনের সঙ্গে খাপ খায় না, যার ফলে এসব পাথর গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে প্রাচীন বরফযুগ ও হিমবাহের গতিপথ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে। এস্তোনিয়ায় এ ধরনের অসংখ্য পাথর পাওয়া গেলেও ভিমসি শপিং সেন্টারের মাঝখানে থাকা এই পাথরটি অন্তত ১০ হাজার বছর আগে এখানে এসে জমে ছিল বলে ধারণা করা হয়।
এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর পাথরটির ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব আরো স্পষ্ট হয়। তখন পাথরটিকে না সরিয়ে বরং তাকে ঘিরেই শপিং সেন্টার তৈরি করা হয়। প্রথমে অনেকেই এ ঘটনাকে অদ্ভুত মনে করলেও ধীরে ধীরে এই পাথরই হয়ে ওঠে এলাকার এক বিশেষ আকর্ষণ। এখন এই পাথরের চারপাশে চলে বিভিন্ন আর্ট এক্সিবিশন, প্রদর্শনী এমনকি ছবিও তোলা হয় এর সামনে দাঁড়িয়ে। মানুষ এটিকে কেবল দেখেই না, বরং অনুভব করে প্রকৃতির একটা জীবন্ত টুকরোকে।
এখন ভিমসি শপিং সেন্টার শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়-এটা একসঙ্গে আধুনিকতা ও ইতিহাসের মিলনস্থল। একটি পাথর, যা একসময় ছিল নির্মাণকাজের বাধা, এখন সেটা হয়ে উঠেছে পুরো এলাকার গর্ব।