
বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত সোনাকান্দা দুর্গ। মোগল আমলে জলদস্যুদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনটি প্রধান জলদুর্গের একটি এই সোনাকান্দা দুর্গ। নির্মাণকালের সঠিক সাল ও তারিখ না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয় ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে বাংলার সুবেদার মির জুমলার সময় নির্মিত হয়েছে সোনাকান্দা দুর্গ। এটি নারায়ণগঞ্জ শহরের পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বন্দর থানার সোনাকান্দা গ্রামে অবস্থিত।
দুর্গটি চতুর্ভুজ আকৃতির। দৈর্ঘ্য ২৮৪ ফুট ও প্রস্থ ১৮৭ ফুট। প্রাচীরের উচ্চতা গড়ে ১০ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৩.৫ ফুট। দুর্গের পশ্চিম দিকের মধ্যে একটি উচ্চ মঞ্চ আছে, যার সঙ্গে পাঁচটি খাঁজযুক্ত খিলানপথ। দুর্গের চার পাশে কামানের গোলা নিক্ষেপের জন্য গোলাকার ছিদ্র রয়েছে। দুর্গের একমাত্র প্রবেশ তোরণটি উত্তর দিকে। আরাকান ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সে সময় মোগল সুবেদার এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। রাজধানী প্রতিরক্ষায় এই দুর্গের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
তবে লোককথা আছে যে, জমিদার কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ী শীতলক্ষ্যা নদীতে স্নান করতে গিয়ে জলদস্যু দ্বারা অপহৃত হলে ঈশা খাঁ তাকে উদ্ধার করে দুর্গে নিয়ে আসেন এবং তার পিতাকে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তার বাবা তাকে মুসলমান গৃহে রাত কাটানোর দায়ে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করলে সে এই দুর্গে বসে কান্নায় নিমজ্জিত হন এবং সেই থেকে এই দুর্গের নাম হয় সোনাকান্দা দুর্গ। মতান্তরে বর্ণিত আছে যে বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম নেতা ঈশা খাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনা বিবিকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এনে এই দুর্গে বন্দি করে রেখেছিলেন। তিনি দুর্গে বসে কাঁদার কারণে এই দুর্গের নাম হয় সোনাকান্দা। বর্তমান শীতলক্ষ্যার পারে অবস্থিত দুর্গের ভেতরে অনেক সিঁড়ি নির্মিত উঁচু কামান প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শহরের কোণায় অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত হয়ে পড়ে আছে দুর্গটি। রাতের বেলা এটি হয়ে উঠেছে স্থানীয় মানুষের কাছে আতঙ্কের। কারণ বিভিন্ন চুরি ছিনতাইসহ মাদক সেবন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে জায়গাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। দুর্গের দেওয়ালের গায়ে শ্যাওলা ও নানা পরগাছা জন্ম নিয়েছে, প্রায় ভেঙে পড়ছে দেওয়ালগুলো। দিনের পর দিন পরিচর্যা না হওয়ায় ঝোপঝাড়-জঙ্গলে সাপসহ নানা প্রাণীর আনাগোনা সেখানে। এটাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুষ্ঠু তদারকির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।