
বয়স যখন ৯০, তখন বেশির ভাগ মানুষ জীবনের শেষ সময়টা শান্তিতে কাটাতে চান। কিন্তু চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের এক প্রবীণ মা জীবনের এই সময়ে বেছে নিয়েছেন এক ভিন্ন পথ।
বয়সের ভারকে উপেক্ষা করে নিজে নিজে আইন শিখেছেন তিনি, শুধু ছেলের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানোর জন্য। এটি শুনতে সিনেমার কাহিনির মতো মনে হলেও ঘটনাটি পুরোপুরি সত্যি।
হে নামের এই প্রবীণ মা তার ৫৭ বছর বয়সী ছেলে লিনের পক্ষে লড়ছেন। যাকে ২০২৩ সালের এপ্রিলে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, লিন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী হুয়াংয়ের কাছ থেকে ১১ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ান (প্রায় ১৪১ কোটি টাকা) আদায় করেছিলেন। মামলাটি এখন ঝৌশান মিউনিসিপ্যাল ইন্টারমিডিয়েট কোর্টে চলছে। যেখানে মায়ের হাত ধরেই ছেলে তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
দক্ষিণ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, হে গত বছর আইন শেখা শুরু করেন, কারণ তিনি ছেলেকে ভীষণ মিস করছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তার বয়সের কথা ভেবে আপত্তি তুললেও তিনি কিছুতেই থামেননি।
তার নাতনির ভাষায়, ‘দাদি খুব জেদি। তিনি ফৌজদারি আইন আর ফৌজদারি কার্যবিধির বই কিনে একা একাই পড়া শুরু করেন।’
শুধু বই পড়াই নয়, হে প্রতিদিন আদালতে গিয়ে অনুরূপ মামলার নথি ঘেঁটে দেখেন, যাতে ছেলের মামলার জন্য সব দিক থেকেই প্রস্তুত থাকতে পারেন।
প্রথমবার আদালতে হাতকড়া পরা অবস্থায় ছেলেকে দেখে হে প্রায় ভেঙে পড়েছিলেন। তার জন্য কান্না আটকানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক ঘণ্টা পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আদালত তখন আগে থেকে রাখা অ্যাম্বুলেন্স ডাক্তারদের দিয়ে তার শারীরিক পরীক্ষা করান। ডাক্তাররা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলেও হে রাজি হননি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন ছেলের পাশে থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে।
মামলার পটভূমি
লিন ও হুয়াং একসময় গ্যাস উৎপাদনের ব্যবসায় অংশীদার ছিলেন। কিন্তু হুয়াং প্রায়ই সময়মতো টাকা পরিশোধ করতেন না। যদিও তিনি ২০০৯ সালে চীনের ১০০ ধনীর একজন ছিলেন। ঠিক মতো টাকা না দেওয়ায় লিনের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়।
পরে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে লিন তার হিসাবরক্ষক হুয়াংকে ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের কাছে অনিয়ম ফাঁস করার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেন।
শেষমেশ হুমকিতে বিরক্ত হয়ে হুয়াং ২০২৩ সালের শুরুর দিকে লিনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।