Logo
×

Follow Us

ফিচার

বনবিবি :

সুন্দরবন এলাকার মানুষের এক সরল বিশ্বাস

Icon

শৈলজানন্দ রায়

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪৬

সুন্দরবন এলাকার মানুষের এক সরল বিশ্বাস

প্রতীকী ছাবি

বাংলাদেশ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ দেশ। আর এটাই আমাদের গৌরব। বহু মানুষের এই দেশে বহু রীতি, পূজাপার্বণ, আঞ্চলিক, জাতি ও ধর্মীয় সংষ্কৃতির প্রচলন রয়েছে। বনবিবি এমনই একটি লৌকিক দেবী তথা পিরানি। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর দ্বারা পুজিত হন। এই জনগোষ্ঠীর মানুষ নির্বিশেষে বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পূজা করে। বনবিবি বনদেবী, বনদুর্গা, ব্যাঘ্রদেবী বা বণচণ্ডী নামেও পরিচিত। কোনো কোনো মন্দিরে তিন ব্যাঘ্র-দেবদেবী বনবিবি, দক্ষিণরায় ও কালু রায় একসঙ্গে পুজিত হন। আবার কোথাও বনবিবি-শাহজঙ্গলির যুগ্ম বিগ্রহও পুজিত হতে দেখা যায়। এই উপলক্ষে কোথাও কোথাও মেলার আয়োজন করা হয়। ইতিহাসবিদ সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোহর খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণরায়, বণিক ধোনাই ও মোনাই এবং গাজীর অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বনবিবি ছিলেন ইব্রাহিম নামের এক আরবের কন্যা। ইব্রাহিমের স্ত্রী গুলাল বিবি সতীনের প্ররোচনায় সুন্দরবনে পরিত্যক্ত হলে সেখানেই বনবিবির জন্ম হয়। কথিত আছে, গুলাল বিবি মদিনা এবং ইব্রাহিম মক্কা হতে এসেছিলেন। দক্ষিণরায় ছিলেন যশোহরের ব্রাহ্মণনগরের রাজা মুকুট রায়ের অধীন ভাটির দেশের সামন্ত। দক্ষিণরায়ের সঙ্গে বনবিবির একাধিক যুদ্ধ হয়। শেষে দক্ষিণরায় পরাজিত হয়ে সন্ধি করেন। দক্ষিণরায়ের পরাজয়কে এই গ্রন্থে বাঘ বা অপশক্তির পরাজয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশের সুন্দরবন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেন বনবিবি। 

কিংবদন্তি : বনবিবির কিংবদন্তিগুলো ‘বনবিবির কেরামতি’ বা বনবিবির অলৌকিক কার্যাবলি ও ‘বনবিবির জহুরানামা’ নামে কয়েকটি লোককাব্যে পাওয়া যায়। এই কাব্যের কবিদের মধ্যে বায়ানউদ্দীন ও মোহাম্মদ খাত্তর বিশেষ পরিচিত এবং উভয়ের গ্রন্থের বিষয়বস্তুর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য দেখা যায়। এই কাহিনির দুটি প্রধান পর্ব : দক্ষিণরায়ের সঙ্গে যুদ্ধ ও দুখের বিবরণ।

দক্ষিণরায়ের সঙ্গে যুদ্ধ : কিংবদন্তি অনুযায়ী, বনবিবি হলেন মক্কা থেকে আসা ইব্রাহিম ফকিরের কন্যা। ইব্রাহিমের প্রথমা পত্নী ফুলবিবি নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি এক শর্তে স্বামীকে পুনরায় বিবাহের অনুমতি দেন। ইব্রাহিম বিবাহ করেন গুলালবিবিকে। এই সময় আল্লাহ বিশেষ উদ্দেশ্যে স্বর্গ থেকে বনবিবি ও শাহ জঙ্গলীকে গুলালবিবির সন্তান রূপে জন্মগ্রহণের নির্দেশ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। গুলালবিবি গর্ভবতী হলে ইব্রাহিম ফুলবিবির শর্তানুসারে তাঁকে বনভূমিতে ফেলে আসেন। এই বনেই বনবিবি ও শাহ জঙ্গলী জন্মগ্রহণ করেন। সুন্দরবনের অধিবাসীরা এখানকার জনবসতি অঞ্চলকে বনবিবির রাজ্য হিসেবে স্বীকার করলেও দক্ষিণরায়কে তারা গভীর জঙ্গলের শাসক মনে করত। 

সুন্দরবণের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে এমন বহু ঘটনা-রূপকথা ও লোককথা চালু আছে। সেগুলো এখনো এ এলাকার মানুষ বিশ্বাস করে-পালন করে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫