Logo
×

Follow Us

ফিচার

দেশে দেশে মিলাদুন্নবীর (সা.) প্রচলন

Icon

আবিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯

দেশে দেশে মিলাদুন্নবীর (সা.) প্রচলন

প্রতীকী ছবি

‘জন্মদিন’কে আরবিতে বলা হয় ‘মিলাদ’। আর সে হিসেবে বাংলায় মিলাদুন্নবীর অর্থ ‘নবীর জন্মদিন’। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিনকে বলে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’। অর্থাৎ ঈদের মতোই দিনটি মুসলমানদের জন্য আনন্দের। দিনটিকে ঘিরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দোয়া এবং মিলাদ মাহফিল ছাড়াও লাখো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় শোভাযাত্রা, যা ‘জশনে জুলুস’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ সমগ্রবিশ্বে সুদীর্ঘকাল ধরে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে আড়ম্বরভাবেই পালিত হয়ে আসছে।  

ঐতিহাসিকদের মতে, নবী করীম (সা.) হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। যদিও এ বিষয়ে সকল ঐতিহাসিক একমত নন, তবে রাসুলুল্লাহর জন্মদিন ‘সোমবার’ সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। ইতিহাসবিদরা প্রায় সবাই একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে ‘সোমবার’ নবী করীম (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। এই সোমবার ৮ অথবা ৯ কিংবা ১২ তারিখ-হিসাবের পার্থক্য এটুকুতেই। ভারতীয় উপমহাদেশে সুদীর্ঘকাল ধরে ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন হিসেবে পালন হয়ে আসছে। আবার ১২ রবিউল আউয়াল যে মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী-এই বিষয়ে ঐতিহাসিকরা একমত পোষণ করেন । (সূত্র : ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

বিশ্বে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর প্রচলন

ইবনে জারীর সূত্র মতে, নবী করীম (সা.) মক্কায় যে ঘরে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন, সেই ঘরটি জিয়ারত ও দোয়া করার প্রথা সর্বপ্রথম চালু করেন বাদশাহ হারুনুর রশীদের মা খায়জুরান বিবি। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন তার তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালকে নবী করীম (সা.)-এর জন্ম দিবস ধরে নিয়ে পালন করা হতো।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ৩৫২ হিজরিতে (৯৬৩ খ্রি.) বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার প্রধান প্রশাসক বনী বুয়াইহির শাসক মুইজলি দ্বিনিল্লাহ-রাসুল (সা.), হজরত আলী (রা.), হজরত ফাতিমা (রা.), ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হুসাইন (রা.)-এর জন্মদিন উদযাপনের প্রচলন ঘটান।  

ইরাকের ইরবিল প্রদেশের শাসক আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন কুকুবুরীর নামও ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রবর্তক হিসেবে বেশি প্রসিদ্ধ। তিনি সুন্নীসহ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের সংস্কৃতির প্রচলন করেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। 

মিলাদুন্নবী (সা.)-এর ওপর ‘কিতাবুল তানভীল ফি মাউলিদিস সীরা-জিল মুনীর’ নামক এই গ্রন্থ সর্বপ্রথম রচনা করেন স্পেনের অধিবাসী আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে হাসান ইবনে দেহিয়া আল কালবি। তিনি ৯০ বছরের দীর্ঘ জীবনে বিশ্বের বহু স্থানে ভ্রমণ করেন এবং ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করেন।

উপমহাদেশে মিলাদুন্নবী (সা.) প্রচলন

ভারতীয় উপমহাদেশে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের সংস্কৃতির প্রচলন করেন মোগল সম্রাট হুমায়ুন। সম্রাট আকবরের অভিভাবক বৈরাম খাঁ এই সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যান। শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সময় উপমহাদেশে সুন্নিদের মাঝে এই সংস্কৃতি আরো ব্যাপক আকারে প্রচলন ঘটে। 

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত থাকার পরও ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের মাঝে দিনটি কালক্রমে উৎসবে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে এই দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দিনটি পালনে সর্বপ্রকার সহযোগিতাও করা হয়।  

মিলাদুন্নবী (সা.)-এর আমল

নবী করীম (সা.)-এর জন্মদিন হওয়ার কারণে প্রতি সোমবার রোজা রাখা মুস্তাহাব। সোমবার রোজা রাখার বিষয়ে নবী করীম (সা.) বলে গেছেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমাকে নবুওয়াত দান করা হয়েছে (সহিহ মুসলিম : ১১৬২)। অন্য এক হাদিসে নবী করীম (সা.) বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং রোজা অবস্থায় আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হোক, এটা আমি পছন্দ করি।’ (সুনানে তিরমিজি : ৭৪৭)। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুস

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুসটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস হিসেবে স্বীকৃত। ২০২২ সালে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এই জুলুসকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামে বলুয়ারদিঘি খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে সর্বপ্রথম জুলুসটি বের করে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। প্রতি বছর এই জুলুসে কতজন মানুষ অংশ নেয়, নির্দিষ্ট করে কোনো পরিসংখ্যান জানা যায় না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫