
প্রতীকী ছবি
খেলাধুলা শিশুর সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠা এবং তার মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি শিশুর আবেগ, মানসিক, শারীরিক সেই সঙ্গে সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। শিশুর যখন পেশি সঞ্চালনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসতে থাকে, তখন থেকেই সক্রিয় খেলার মাধ্যমে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয়। তার মানসিক, সামাজিক, আবেগীয় ও ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রেও খেলার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
সামাজিকতা শিক্ষা : খেলার মাধ্যমেই শিশু একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে মেশার সুযোগ পায়। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই শিখে নেয় কী করে অন্যের সঙ্গে মিশতে হয়, অন্যদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে হয়। এতে শিশু আত্মকেন্দ্রিক জগৎ থেকে বেরিয়ে ক্রমেই সামাজিক হয়ে ওঠে।
নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা : যেকোনো খেলাতেই একজন দলনেতা থাকে। দলের প্রত্যেকেই যেন খেলার নিয়ম মেনে চলে, সে জন্য দলের একজন নির্দেশনা দেয়। এতে শিশুর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়। খেলার মাধ্যমেই তারা শিখে নেয় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাটাও।
কর্মদক্ষতা যাচাই : খেলতে গিয়ে শিশু তার বন্ধুদের সঙ্গে নিজের কর্মদক্ষতার তুলনা করে। তাদের মধ্যে সব সময়ই এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায় কে কার থেকে বেশি পারদর্শী তা নিয়ে, যেমন-কে কেমন দৌড়াতে পারে।
নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা : প্রতিটি খেলারই নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। একই সঙ্গে বন্ধুদের দলেও কিছু নিয়মকানুন থাকে। দলে খেলার ফলে তারা দলের রীতিনীতি কায়দা-কানুন আয়ত্ত করে। এতে করে যেকোনো বিষয়ে নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস তৈরি হয়। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার শিক্ষাও শিশুরা খেলার মাধ্যমেই শিখে থাকে।
মানবিক গুণাবলি : শিশুর সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি, সামাজিক জ্ঞান, সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব বিকশিত হয় খেলার মাধ্যমেই। খেলতে গিয়ে শিশু তার সমবয়সী অন্য শিশুর কাছ থেকে সহযোগিতা করা, উদারতা, সত্যবাদিতার মতো মানবিক গুণাবলি শিখে থাকে।
কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ : খেলাই একমাত্র মাধ্যম, যেখানে কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পায় শিশু। তবে শিশু প্রথমে শেখে সমান্তরাল খেলা, যেটা নিজে খেলে তবে অন্য শিশুদের উপস্থিতিতে। এরপর শিশুর আগ্রহ দেখা যায় অন্য শিশুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের। এই সংযোগ খেলনা আদান-প্রদান থেকে শুরু করে মারামারি পর্যন্ত গড়াতে পারে।
আবেগ প্রকাশের মাধ্যম : খেলা যেমন আবেগের আনন্দদায়ক বহিঃপ্রকাশে সাহায্য করে, তেমনি শিশু যে আবেগ প্রকাশ করতে ভয় পায়, তা খেলার মাধ্যমে প্রকাশ করে। শিশু মনের সব অবদমিত ইচ্ছা ও দ্বন্দ্ব খেলার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। খেলাধুলাকে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর চিকিৎসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।