
শারদীয় পূজা কেবল ধর্মীয় আচার তো বটেই, সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব। পূজার দিনগুলোতে প্রতিটি পরিবার নতুন পোশাকের সাজে রঙিন হয়ে ওঠে। কিন্তু আজকের দিনে পূজার ফ্যাশন কেবল নতুন পোশাক পরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ভেতরে লুকিয়ে আছে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার, আধুনিকতার ছোঁয়া আর রুচির প্রকাশ। সেই রুচিকে গড়ে তোলে তিনটি উপাদান-ফেব্রিক, রং ও মোটিফ। আর এবারের পূজার ফ্যাশনে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে পোশাকের ফেব্রিক, রঙের ব্যবহার আর মোটিফের কারুকাজ। লিখেছেন সুবর্ণা মেহজাবীন...
ফেব্রিক : ঐতিহ্যের সঙ্গে আরামের মেলবন্ধন
পোশাকের ফেব্রিক সব সময়ই উৎসবের সাজ নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখে। পূজার সময়ে একদিকে আবহাওয়ার উষ্ণতা, অন্যদিকে দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে থাকা-এই দুয়ের মাঝে কাপড়ের বাছাই হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুতি, হ্যান্ডলুম, খদ্দর কিংবা লিনেনের মতো কাপড় এখনো প্রথম পছন্দ। এগুলো শুধু আরামই দেয় না, বরং শরীরের সঙ্গে সহজে মিশে যায়। তবে আরামেই শেষ নয়। উৎসবের আবহজুড়ে যাচ্ছে মসলিন, তসর বা সিল্কের মতো ঐতিহ্যবাহী ফেব্রিকও। মসলিন বা সিল্কের ঝলমলে পরশ উৎসবের আভিজাত্যকে বাড়িয়ে তোলে। অনেক ডিজাইনার এখন হাইব্রিড ফেব্রিক ব্যবহার করছেন, যেখানে তুলার আরামের সঙ্গে সিল্কের ঝলক মিশে তৈরি হচ্ছে নতুন স্টাইল স্টেটমেন্ট। ফলে একই সঙ্গে ব্যাবহারিক আর বিলাসিতা দুই-ই ধরা দিচ্ছে পূজার পোশাকে।
পূজার আবহে বৈচিত্র্যের রং
পূজার কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল-সাদা রঙের চিরন্তন সমন্বয়। মা দুর্গার প্রতিমা থেকে শুরু করে সিঁদুর খেলা-এই দুই রং পূজার প্রতীক হয়ে আছে। কিন্তু আধুনিক পূজার ফ্যাশনে এই ঐতিহ্যের বাইরে পা ফেলেছে আরো অনেক রং। এবারকার ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে দুটি প্রবণতা। একদিকে রয়েছে প্যাস্টেল টোন-হালকা গোলাপি, পুদিনা সবুজ, মেটে হলুদ কিংবা ধূসর। এই নরম রংগুলো দিনব্যাপী আরামদায়ক এবং পরিধানকারীকে এনে দেয় এক ধরনের প্রশান্তি। অন্যদিকে উৎসবের সন্ধ্যা বা অষ্টমীর সাজে দারুণ মানাচ্ছে গাঢ় রঙের ছটা-টেরাকোটা, মেরুন, রাজকীয় নীল ও পান্না সবুজ।
নকশায় ঐতিহ্য আর নতুনত্বের সংলাপ
ফ্যাশনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মোটিফের ব্যবহার। একসময় ফুলেল নকশাই ছিল প্রধান, কিন্তু এখনকার পোশাকে মোটিফের জগৎ অনেক বিস্তৃত। ঐতিহ্যবাহী মোটিফ যেমন কলাবতী, জামদানি বা নকশিকাঁথা এখনো সমান জনপ্রিয়। ঢাকাই জামদানির সূক্ষ্ম ছাপ কিংবা কাঁথার সেলাই করা নকশা-এসবই বহন করে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। একই সঙ্গে সমকালীন প্রজন্মের রুচি ধরতে এসেছে অ্যাবস্ট্রাক্ট ডিজাইন, জ্যামিতিক ছাপ, ট্রাইবাল মোটিফ এমনকি ডিজিটাল প্রিন্ট। ফলে পূজার পোশাক হয়ে উঠছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ক্যানভাস, যেখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সংলাপ প্রতিফলিত হয়।