
খবরের কাগজ বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা প্রায়ই বিচিত্র ঘটনার কথা শুনি। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন, শুধু এক চামচ মেয়োনিজ না পাওয়ার কারণে কেউ রেস্টুরেন্টে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে? অবিশ্বাস্য শোনালেও স্পেনের সেভিয়ার এক ছোট শহরে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি এতটাই অস্বাভাবিক যে স্থানীয়রা একে ‘অবাস্তব’ বলে বর্ণনা করেছেন।
সম্প্রতি স্পেনের লস পালাসিওস ই ভিলাফ্রাঙ্কা শহরে এক ক্ষুব্ধ ক্যাফে-গ্রাহককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, তিনি শুধু মেয়োনিজ না পাওয়ার কারণে একটি ক্যাফেতে আগুন লাগিয়েছিলেন। তথ্যটি অডিটি সেন্ট্রালের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
গত বুধবার দুপুরবেলা পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি তার ছেলেকে নিয়ে শহরের একটি ক্যাফেতে ঢোকেন। তারা দুজনের জন্য স্যান্ডউইচ অর্ডার দেন। খাওয়ার সময় ওয়েটারের কাছে মেয়োনিজ চাইলে জানায়, এই মুহূর্তে ক্যাফেতে মেয়োনিজ নেই।
এরপর তিনি আরেকজন ওয়েটারের কাছেও একই অনুরোধ করেন, কিন্তু সেখান থেকেও একই উত্তর পান। এতে রেগে গিয়ে তিনি ক্যাফে থেকে বেরিয়ে নিকটবর্তী একটি পেট্রোল পাম্পে যান এবং সেখান থেকে একটি বোতল ভর্তি পেট্রোল নিয়ে ফিরে আসেন।
ফিরে এসে তিনি আবারও মেয়োনিজ চেয়েছিলেন। আর এবারও যখন উত্তর ছিল ‘নেই’ তখন তিনি হঠাৎই ক্যাফের কাউন্টারে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে ক্যাফেটি যেন আগুনের বলয় হয়ে যায়। উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে বাইরে চলে যান। আগুনের তীব্রতা এবং ধোঁয়ার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
এতে শুধু উপস্থিত লোকজনই নয়, আগুন লাগানো ওই ব্যক্তি নিজেও বিপদে পড়েন। পালানোর সময় তার বাঁ হাত আগুনে ঝলসে যায়। তবুও তার এই আচরণে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটেনি। সৌভাগ্যক্রমে ক্যাফের কর্মীরা দ্রুত অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ ডলারের মতো, তবে মানুষের জীবন বাঁচানো গেছে। পুলিশ কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
বর্তমানে তিনি আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। ক্যাফের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঘটনার পরে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, পুরো পরিস্থিতি ছিল ‘অবিশ্বাস্য এবং সুররিয়াল।’ তারা কর্মীদের দ্রুত পদক্ষেপের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসা করেছে, যাদের কারণে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এই ঘটনার সবচেয়ে আশ্চর্য অংশ হলো খাবারের প্রতি ভালোবাসা কখনো কখনো কতটা অদ্ভুত রূপ নিতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য মেয়োনিজ কেবল একটি সস, কিন্তু কিছু মানুষের জন্য তা প্রিয় খাবারের অপরিহার্য অংশ। আর এই প্রয়োজনীয়তার অস্বাভাবিক রূপ এ ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
স্থানীয়রা এই ঘটনা নিয়ে এখনো বিস্ময়ে আছেন। কেউ কেউ এটিকে হাস্যকর মনে করছেন, আবার কেউ আশ্চর্যবোধ করছেন। আবার কেউ ভাবছেন কীভাবে একটি খাবারের অভাব মানুষের এমন চরম প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। সত্যিই বাস্তব জীবনের ঘটনা মাঝে মাঝে সিনেমার চেয়ে অনেক বেশি অদ্ভুত ও নাটকীয় হতে পারে।