
প্রতি বছর বর্ষা এলেই ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খাল-বিল ও নিচু জলাভূমি যেন জাতীয় ফুল শাপলার সৌন্দর্যে ভরে ওঠে। বর্তমানে এই জলাশয়গুলোতে ফুটে আছে অসংখ্য সাদা শাপলা, যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত মানুষ। শাপলার কোমলতা যেমন মন কেড়ে নেয়, তেমনি এর নির্মল সৌন্দর্য যেন এই গ্রামের নীরব এক কাব্য হয়ে ধরা দেয়।
সরেজমিনে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি জলাশয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার বুক চিরে মাথা উঁচু করে আছে সাদা শাপলা। এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে সকাল-বিকেল এখানে ভিড় করছেন অগণিত মানুষ। কেউ ক্যামেরায় এই সৌন্দর্য ধরে রাখছেন, আবার কেউ নৌকায় উপভোগ করছেন প্রকৃতির এই দান।
শাপলার মাঝে লুকিয়ে আছে গ্রামের সহজতা।খোয়াড় গ্রামের বাসিন্দা হেমায়েত ফকির বলেন, ‘আমাদের খোয়াড় গ্রাম এমনিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। বর্ষায় শাপলা ফুল সেই সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সাদা শাপলা যেমন বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক, তেমনি এই শাপলার শুভ্র রং আমাদের গ্রামের সহজ-সরল মানুষের পবিত্র মনের প্রতিচ্ছবি।’ তিনি আরো বলেন, এই সৌন্দর্য রক্ষা করা গেলে গ্রামটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে।
শাপলার বিলের আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল এবং দেশি মাছের আনাগোনা এই পরিবেশকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
এই জমিতে শুকনো মৌসুমে পেঁয়াজ ও পাট চাষ করা হয়। আবার এখানেই বর্ষায় প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফুলের গাছ জন্মায়। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ প্রতিদিন এই ফুলের হাসি দেখতে ছুটে আসে।
জীবন-জীবিকার উৎসও শাপলা
স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজ মোস্তফা বলেন, শরৎকালে শাপলা বিলঝিলের সৌন্দর্য বাড়ালেও এটি কেবল চোখের আরাম নয়, এটি আমাদের জীবিকারও সুযোগ করে দিয়েছে। অনেক স্থানীয় মানুষ শাপলা তুলতে বা দেখতে আসা পর্যটকদের নৌকায় করে ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় গ্রামের মানুষ শাপলার শিকড়ে থাকা শালুক সিদ্ধ করে খেত। এখন অর্থনৈতিক পরিবর্তন এলেও অনেকে এখনো শাপলা সবজি হিসেবে রান্না করে খায়।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার জানান, ‘শাপলা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এটি একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ রয়েছে। শাপলার বীজ দিয়ে খইও তৈরি করা হয়।’
এই মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আসা মানুষের মতে, নীরব ও শান্ত দুপুরে শাপলার বিল হয়ে উঠতে পারে মানসিক প্রশান্তির দারুণ এক উৎস।