
রেচেল কৌর
আমাদের অনেকের কাছেই প্রতিদিন অফিসে যাওয়া মানে হচ্ছে বাস, ট্রেন কিংবা গাড়িতে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া-ট্রাফিক জ্যাম, ক্লান্তি আর হর্নের বিরক্তিকর শব্দ। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত রেচেল কৌরের জীবন একেবারেই আলাদা। প্রতিদিন তিনি প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অফিসে যান এবং তা আবার বিমানে চেপে!
প্রথমে শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এটাই বাস্তব। আর এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে খরচ ও সময় বাঁচানো এবং সন্তানের কাছে থাকার গভীর তাগিদ।
প্রতিদিন ভোরে তিনি পেনাং থেকে বিমানে ওঠেন এবং দিনশেষে কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে আসেন বাড়িতে। এই রুটিন তাকে এনে দিয়েছে ‘সুপারমম’ ও ‘সুপার কমিউটার’-এর খেতাব। কারণ সংসার ও কর্মজীবনের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে এমন দৃষ্টান্ত খুব কমই দেখা যায়।
রেচেল কৌর পেশায় এয়ার এশিয়ার ফাইন্যান্স অপারেশনের সহকারী ম্যানেজার। কাজের সুবিধার জন্য একসময় তিনি কুয়ালালামপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কিন্তু এতে প্রতি মাসে ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছিল। আর সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল সপ্তাহে মাত্র একবার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ।
তার ছেলের বয়স ১২ ও মেয়ের ১১। মা হিসেবে সন্তানদের বড় হতে দেখা ও পাশে থাকার প্রয়োজনে তিনি ২০২৪ সালের শুরুতে এই বিচিত্র সিদ্ধান্ত নেন।
তার কথায়, ‘ওরা দুজনই বড় হচ্ছে। আমি চাই মা হিসেবে তাদের পাশে থাকি। প্রতিদিন বাড়ি ফেরার ফলে অন্তত একসঙ্গে রাতের খাবার খেতে পারি, হোমওয়ার্কে সাহায্য করতে পারি।’
এই সিদ্ধান্ত রেচেলের জীবনে এনেছে বড় পরিবর্তন। প্রতিদিন আকাশপথে যাতায়াত করলেও এখন তার মাসিক খরচ দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ হাজার টাকার মতো।
রেচেলের দিন শুরু হয় ভোর ৪টায়। তৈরি হওয়ার পর সকাল ৫টার মধ্যে পৌঁছে যান পেনাং বিমানবন্দরে। ৫টা ৫৫ মিনিটের ফ্লাইট ধরে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে অফিসে পৌঁছে যান। সারা দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় আবার বিমানে করে বাড়ি ফেরেন। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া এবং সন্তানদের পড়াশোনায় সাহায্য করাই তার দিনের সবচেয়ে আনন্দের সময়।
শারীরিকভাবে কিছুটা কষ্টকর হলেও তিনি এই সময়টাকে নিজের জন্য কাজে লাগান। ফ্লাইটে কখনো গান শোনেন, জানালার পাশে বসে মেঘের খেলা উপভোগ করেন, আবার কখনো নিজের ভাবনায় ডুবে থাকেন।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এত কষ্ট করে অফিসে না গিয়ে তিনি কেন বাড়ি থেকে কাজ করেন না? রেচেলের জবাব একেবারে স্পষ্টÑ‘অফিসে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের পরিবেশটাই আলাদা। কাজের মান ও গতি দুই-ই ভালো হয়।’
রোজকার এই ‘বিমানযাত্রা’ তার কাছে শুধু কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানো মাধ্যম নয়, বরং সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার সেতুও বটে। অনেকের কাছে রেচেলের কর্মকাণ্ড অদ্ভুত মনে হলেও তার কাছে এটাই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান।
তথ্য সূত্র : ফার্স্ট-পোস্টের প্রতিবেদনে তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে।