দাঁত দিয়ে ৭০০ টনের জাহাজ টানলেন মিশরীয় রেসলার

আলপনা আকতার শ্রাবণী
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৬

মিশরের সমুদ্রপাড়ে হঠাৎই জড়ো হলো ভিড়। সবাই তাকিয়ে আছে বিশাল এক জাহাজের দিকে। আর জাহাজের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন মানুষ। যিনি দাঁত দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন পুরো জাহাজ!
অবিশ্বাস্য শোনালেও ঘটনাটি সত্যি। ৪৪ বছর বয়সী আশরাফ মাহরুস নামের মিশরীয় এই রেসলার পরিচিত ‘কাবোঙ্গা’ নামে।
লোহিত সাগরের তীরবর্তী পর্যটন নগরী হুরগাদায় তিনি দাঁত দিয়ে টেনে এনেছেন ৭০০ টনেরও বেশি (ছয় লাখ ৩৫ হাজার কেজি) ওজনের একটি জাহাজ। শুধু তা-ই নয়, পরে একসঙ্গে দুটি জাহাজ টেনেছেন, যেগুলোর সম্মিলিত ওজন প্রায় এক হাজার ১৫০ টন। স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে।
দেশজুড়ে ‘কাবোঙ্গা’ নামে পরিচিতি থাকলেও মানুষের কাছে তিনি আসলে একজন ‘স্ট্রংম্যান’। ঘটনার পর মাহরুস গর্ব করে বলেন, ‘আজ আমি বিশ্বরেকর্ড ভাঙতে এসেছি। আল্লাহর রহমতে আমি তা করতে পেরেছি। পুরো বিশ্ব জানুক, আল্লাহ আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ বানিয়েছেন।’
মাহরুস তার এই ভিডিও ও ছবি পাঠাবেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কাছে। বর্তমানে দাঁত দিয়ে জাহাজ টানার রেকর্ডটি ২০১৮ সালে গড়া। তখন একজন ৬১৪ টনের (পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার কেজি) জাহাজ টেনেছিলেন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে মাহরুসের নামই উঠতে পারে নতুন ইতিহাসে।
তবে এটা মাহরুসের প্রথম কাণ্ড নয়। এর আগেও মাহরুস দাঁত দিয়ে ট্রেন, ট্রাক টেনে তাক লাগিয়েছেন সবাইকে। গত মার্চেই তিনি দাঁতে দড়ি বেঁধে প্রায় ২৭৯ টনের একটি ট্রেন ১০ মিটার পর্যন্ত টেনেছিলেন। এ জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম উঠে গেছে গিনেস রেকর্ডে। তিন বছর আগে দাঁত দিয়ে ১৫ টনেরও বেশি ওজনের ট্রাক টেনেও আলোচনায় আসেন তিনি।
কিন্তু এত শক্তি তিনি পান কিভাবে? মাহরুসের দিন শুরু হয় ভারী ডায়েট দিয়ে। প্রতিদিন খেয়ে ফেলেন এক ডজন ডিম, দুটি মুরগি আর প্রায় পাঁচ কেজি মাছ। ওজন ১৫৫ কেজি হলেও উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। ফলে তাকে দেখলেই বোঝা যায় তিনি অন্যরকম এক মানুষ।
এই কীর্তির জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা অনুশীলন করেন তিনি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তিনি কোনো সাপ্লিমেন্ট খান না। তার মতে, ভালো খাওয়া, ভালো ঘুম আর নিয়মিত কসরতই তাকে এত শক্তি দিয়েছে।
মাহরুস জানান, ছোটবেলা থেকেই তার অদ্ভুত শক্তি প্রকাশ পেতে শুরু করে। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি ভারী জিনিস তুলে অর্থ উপার্জন করতেন। একবার খেলার ছলে বন্ধুকে টানতে গিয়ে তার হাত ভেঙে ফেলেছিলেন দুর্ঘটনাবশত।
খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি কুংফু, কিকবক্সিং শিখেছেন এবং কায়রোতে একটি রেসলিং দলও গড়ে তুলেছেন। তার বন্ধুরা দেখেছিলেন, মাহরুস ফাঁকা জায়গায় সহজেই বিশাল টায়ার একটানা ১০ বার উল্টে ফেলতে পারেন কিংবা এক আঙুল দিয়ে গাড়ি ঠেলতে পারেন। সেখান থেকেই তার বন্ধুরাই তাকে বিশ্বরেকর্ড চ্যালেঞ্জ করতে উৎসাহিত করেন।
দাঁত দিয়ে জাহাজ টেনে ফেলাই যেখানে তার কাছে সাধারণ, সেখানে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শুনলে চমকে যাবেন। তিনি চান দাঁত দিয়ে সাবমেরিন টানতে! এমনকি একদিন বিমানের সঙ্গেও শক্তির লড়াই করতে চান। তাও নাকি শুধু চোখের পাতার পেশি দিয়ে।
মাহরুসের মতে, তিনি টানার আগে বস্তুটির সঙ্গে ‘কথা বলেন’। তিনি বলেন, ‘আমি যে জিনিসটি টানব, সেটাকে নিজের শরীরের অংশ হিসেবে ভাবতে হয়। যেন সেটা আমার হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে একসঙ্গে নড়ে ওঠে।’