Logo
×

Follow Us

ফিচার

ফুলবাড়ির চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িই ভরসা

Icon

ফয়সাল শামীম

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১৯

ফুলবাড়ির চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িই ভরসা

পণ্য পরিবহনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও এখনো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। বিস্তীর্ণ দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হয় এই গাড়িতেই। যুগ যুগ ধরে বারোমাসিয়া ও নীলকমলসহ বিভিন্ন নদ-নদীর চরে একসময় নিত্যপণ্য পরিবহনে গরু বা মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা হতো। কালের পরিক্রমায় বদলে যেতে শুরু করে সেই চিত্র। যোগ হয় ঘোড়ার গাড়ি। ইঞ্জিনচালিত গাড়ির এ যুগেও টিকে আছে ঘোড়ার গাড়ি। এই ঘোড়ার গাড়ি চরের একটি বড় অংশের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যমও। 

সরেজমিনে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমণ্ডল, চরগোরকমণ্ডল ও পশ্চিম ফুলমতির দুর্গম চরগুলোতে গেলে চোখে পড়ে নিত্যপণ্য ও কৃষিপণ্য পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহৃত হতে। ধু-ধু বালুময় চরের ওপর দিয়ে মালামাল নিয়ে ছুটে চলেছে শত শত ঘোড়ার গাড়ি। শুধুই নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে নয়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার মানুষ সরাসরি ঘোড়ার গাড়ি চালানোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। 

এখানকার ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, চরে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব এলাকা ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ঘোড়ার গাড়িই পণ্য পরিবহন এবং যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। প্রতিটি গাড়িতে ১৫ থেকে ২০ মণ পণ্য অনায়াসেই পরিবহন করা যায়।

পশ্চিম ফুলমতি কলাবাগান এলাকার ঘোড়ার গাড়ি চালক শহিদুল ইসলাম মিয়া ও চরগোরকমণ্ডলের সামেশ আলী জানান, তারা প্রত্যেকেই আট বছর ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাদের গ্রামসহ নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে দুই শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। প্রতিটি ঘোড়ার গাড়িচালক দিনে কমপক্ষে ৮০০ ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ এমনকি দুই হাজার টাকা আয় করেন। দিনে ঘোড়ার খাবার বাবদ খরচ হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। 

চরগোরকমণ্ডল এলাকার ঘোড়ার গাড়িচালক আলামিন, রমজান আলী ও একরামুল হক জানান, আগে গরুর গাড়িতে পণ্য পরিবহন করা হতো। গরু বা মহিষের গাড়িতে দুটি গরু অথবা মহিষ লাগে, খরচও বেশি। আর ঘোড়ার গাড়িতে একটি ঘোড়া হলেই হয়। এতে খরচও অনেক কম পড়ে। চরাঞ্চলে বালু বেশি থাকায় মালামাল পরিবহনে অন্য কোনো যানবাহন চালানো সম্ভব হয় না। খুব সহজেই ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষসহ মালামাল আনা-নেওয়া করা যায়। এতে সারা দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে যায়। 

ফুলবাড়ীর বালারহাট বাজারে কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, ঘোড়ার গাড়ি সব জায়গায় যেতে পারে। চরে ট্রাক্টর ও ভ্যান গাড়ি যেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ঘোড়ার গাড়ি পণ্য পরিবহনের একমাত্র ভরসা। সব জায়গায় গিয়ে সব ধরনের মালামাল বহন করতে পারে এই গাড়ি। এতে খরচ একটু বেশি হলেও সুবিধা অনেক।

একই বাজারের তানিয়া স্টোরের মালিক আবু তালেব জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থাকায় পণ্য পরিবহনে সমস্যা হয় না। কিন্তু শুকনা মৌসুমে বালুতে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। সে ক্ষেত্রে ঘোড়ার গাড়ি খুব সহজেই সেগুলো পরিবহন করতে পারে।

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, একসময় ঘোড়ার পিঠে রাজা-বাদশারা চড়ত। মূলত ঘোড়া তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল। সেই প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ঘোড়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলে প্রচুর ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। বর্তমান যুগে পণ্য পরিবহনে আধুনিকতা এলেও ঘোড়ার গাড়ি বিশেষ করে চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের একমাত্র বাহন হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫