Logo
×

Follow Us

ফিচার

আকাশে বিদ্যুৎ তৈরি করছে চীন

Icon

আলপনা আকতার শ্রাবণী

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৫১

আকাশে বিদ্যুৎ তৈরি করছে চীন

এক সকালে চীনের একটি গবেষণা কেন্দ্র থেকে আকাশে উড়ল এক বিশাল বেলুনের মতো বস্তু। দেখতে অনেকটা বিমানের ইঞ্জিনের মতো। অনেকে ভাবল, হয়তো কোনো নতুন এয়ারশিপ বা কোনো খেলনা টাইপ কিছু। 

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা গেল, এটি আসলে একটি বায়ু টারবাইন, যা বাতাস থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করছে।

শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও সম্প্রতি চীনের গবেষকরা তৈরি করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়ন্ত বায়ু টারবাইন, যার নাম এস১৫০০ (S1500)। পরীক্ষামূলকভাবে এটি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফল হয়েছে। এটাই বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত বায়ু টারবাইন, যা এত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অডিটি সেন্ট্রালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। 

চীন দীর্ঘদিন ধরেই নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানির ওপর বিনিয়োগ করছে। তবে শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, তারা চাইছে খরচ কমিয়ে দক্ষতা আরো বাড়াতে। সেই ভাবনা থেকেই এসেছে এই অভিনব ধারণা। একটি বহনযোগ্য ইনফ্লেটেবল (ফুলানো) টারবাইন, যা সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো যায়, আবার একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারে।

এস১৫০০ ভাসমান উইন্ড পাওয়ার সিস্টেমটি প্রায় ১৩ তলা ভবনের সমান উঁচু এবং একটি বাস্কেটবল কোর্টের সমান লম্বা। এটি দেখতে অনেকটা বিশাল কোনো বিমানের ইঞ্জিনের মতো, আর এটি ১,৫০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উড়তে পারে, সেখানে বাতাসের গতি মাটির কাছের বাতাসের তুলনায় অনেক বেশি ও স্থিতিশীল থাকে। তাই এটি নিচের প্রচলিত টাওয়ারগুলোর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে।

এই টারবাইনটি তৈরি করেছে বেইজিং লিনই ইউনচুয়ান এনার্জি টেকনোলজি কোং লিমিটেড (Beijing Linyi Yunchuan Energy Technology Co. Ltd.). 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই উড়ন্ত বায়ু টারবাইনের ভেতরে রয়েছে হিলিয়াম গ্যাসে ভরা একটি বিশাল ব্যাগ। এটি বেলুনের মতো ফুলে আকাশে ভেসে থাকে। এর চারপাশে আছে রিং আকৃতির ডানা, যা বাতাসের গতিপথ নির্ধারণ করে এবং রোটরকে ঘোরায়।

রোটর ঘুরলেই বিদ্যুৎ তৈরি হয়। ভেতরে রয়েছে ১২টি জেনারেটর, প্রতিটির ক্ষমতা ১০০ কিলোওয়াট। এই জেনারেটরগুলো একসঙ্গে মিলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর সেই বিদ্যুৎ নিচে মাটিতে পাঠানো হয় শক্ত দড়ি ও কেবলের মাধ্যমে।

এই উড়ন্ত টারবাইনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটির জন্য বিশাল ধাতব টাওয়ার বানাতে হয় না। ফলে নির্মাণ খরচ অনেক কমে যায়। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

আরেকটি সুবিধা হলো এর বহনযোগ্যতা। ইনফ্লেটেবল নকশার কারণে এটি সহজে গুটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। তাই দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকা বা দুর্যোগকবলিত স্থানে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

তবে সবকিছুই এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে-

*প্রবল ঝড়, বজ্রপাত বা চরম আবহাওয়ায় টারবাইনটি কতটা স্থিতিশীল থাকবে।

* নিরাপত্তা মান বজায় রেখে নিয়মিত ব্যবহার কতটা সম্ভব। 

* দীর্ঘ মেয়াদে এর উপাদানগুলো টেকসই থাকবে কি না।

এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলে আগামী বছর থেকেই কোম্পানিটি এস১৫০০ মডেলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে। 

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ডান তিয়ানরুই (Dun Tianrui) এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আকাশভিত্তিক এই বায়ুশক্তি ব্যবস্থা সাশ্রয়ী সবুজ বিদ্যুতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।’  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫