Logo
×

Follow Us

ফিচার

শিক্ষার শুরুতেই ঝড়ে পরার তালিকায় হাওরপারের শিশুরা

Icon

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১২

শিক্ষার শুরুতেই ঝড়ে পরার তালিকায় হাওরপারের শিশুরা

হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলার হাওরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে পাঠদান যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলগুলোও অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে হাওরপারের শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থাও ভালো না হওয়ায় তারা অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারছে না। এতে করে মেধা বিকাশের শুরুতেই ঝরে পরার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এই শিশুদের। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় হাওরপারের অভিভাবকরা।

দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, সামাজিক অসচেতনতা, শিক্ষক সংকটসহ নানা কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ৪৭৫টি। এসব বিদ্যালয়ে দুই লাখ ৯১ হাজার ৩৫৩ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট পদের বিপরীতে প্রধান শিক্ষকের ৩৮৯টিসহ সহকারী শিক্ষকের পদ মিলে এক হাজার ২৮টি পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্তদের দায়িত্ব দিয়ে চালানো হচ্ছে দাপ্তরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজ। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ ও বদলিজনিত কারণে অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ে দুই থেকে তিনজন শিক্ষক দিয়ে; আবার কোথাও কোথাও একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষক সংকট দূর করতে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে শিক্ষক এনে পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

শাকিল আহমেদ, জামিল রহমানসহ জেলার কয়েকজন সচেতন অভিভাবক বলছেন, শিক্ষকরা নিজ নিজ উপজেলা বা জেলা শহর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, সেই সব স্কুলে থাকতে চান। আর সে কারণে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদান করেই বদলি হয়ে চলে যান পছন্দমতো কোনো স্কুলে। ফলে হাওরপারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। তারা আরো বলেন, শিশুদের শিক্ষার শুরুটাই শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর সেখানেই যত সমস্যা। হাওরপারের বিদ্যালয়গুলোতে আসা-যাওয়ার সড়ক নেই, বর্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায় শিশু শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো লেখাপড়া হয় না স্কুলগুলোতে। আবার যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক আছে, তারাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসায় এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কঠোর মনিটর না করায় পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপারের মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দেড় শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে অনুমোদিত পাঁচজন শিক্ষকের পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটি খালিই রয়েছে। বর্তমানে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। ফলে পাঠদান কার্যক্রম একা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই শিক্ষক; এমনকি শিক্ষার্থীদের সামলানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছরই কমছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া।

শুধু এই স্কুলটিই নয়, জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক সংকট রয়েছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরপারের এক অভিভাবক শফিক মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আয় কম, জীবন যাপন করাই কঠিন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পাঠাই; কিন্তু শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান হচ্ছে না। এ কারণে ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যেতে চায় না। অর্থের অভাবে ভালো প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতেও পারব না।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা খরচার হাওরপারের বাসিন্দা ও অভিভাবক শাহ আলী, কলিম উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক না থাকায় পড়াশোনা হয় না। আর পুরুষ শিক্ষক নিয়োগে বেশি অগ্রাধিকার দিলে দুর্গম ও হাওর এলাকায় পাঠানো ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজে লাগানো সহজ হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মোহন লাল দাশ জানান, হাওর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবগত আছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে খুব শিগগিরই আর নিয়োগ দেওয়া হলেই এর সমাধান করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫