Logo
×

Follow Us

ফিচার

ফিরোজ আল সাবাহর ক্যামেরায় কাঞ্চনজঙ্ঘা

Icon

ইশতিয়াক হাসান

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:২৬

ফিরোজ আল সাবাহর ক্যামেরায় কাঞ্চনজঙ্ঘা

অনেকেই হয়তো জানেন না বাংলাদেশে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার প্রতি প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের যে ঢল নামে শীতের ঠিক আগে, সেটার শুরু ফিরোজ আল সাবাহর তোলা বরফঢাকা পর্বতটির দুর্দান্ত সব ছবির মাধ্যমে। তার ক্যামেরায় ধরা পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই দ্যুতিময় বরফে মোড়া পাহাড়চূড়ার ছবি দেশজুড়ে পাহাড় ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে প্রবল আলোড়ন তোলে। বাংলাদেশের মাটিতেই দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শিখর! আর এতেই শুরু হয় এক নতুন যাত্রা-শীত নামলেই প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় জমান তেঁতুলিয়ার দিকে; কুয়াশা ভেদ করে কাঞ্চনের প্রথম আলো ধরার আশায়।

            

বলতেই হয়, আজ পঞ্চগড় বিশেষ করে তেঁতুলিয়ার নামে যে পর্যটকের ঢল নামে, ধানক্ষেত পেরিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার যে উৎসব এই উত্তর সীমান্ত, তার প্রেরণাদাতা মানুষটি ফিরোজ আল সাবাহই। বিনয়ী এই মানুষটির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘পঞ্চগড় অর্থাৎ তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রথম ছবি কি আপনার তোলা?’

ফিরোজের জবাব, ‘সেটা বলা মুশকিল ভাই। আমার আগে কেউ তুলতে পারেন। তবে এটা ঠিক-এই এলাকা থেকে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় এটা বাইরের মানুষ ও পর্যটকদের নজর কাড়ে আমার তোলা ছবির মাধ্যমেই। আর এখন কাঞ্চনজঙ্ঘার যেসব ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো আমার তোলা ছবিগুলো।’

আপনি পাহাড় পছন্দ করেন কিংবা শুধু ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, তাহলে ভাবুন তো বাংলাদেশ থেকে তোলা কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবির কথা চিন্তা করলে কোন ছবির কথা মাথায় আসে। আমার মনে যে দুটি ছবি ভাসছে, আপনারও তাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একটি হলো বয়স্ক এক মানুষ নদীর ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, পেছনে তুষার ধবল সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। অপরটি কাঞ্চনজঙ্ঘার পটভূমিতে লাঙল কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির ছবি। বলা চলে, শীতে আলোকচিত্রী ও পর্যটকদের তেঁতুলিয়া ছোটায় বড় ভূমিকা এই দুই ছবির।


‘প্রথম ছবিটি ২০১২ সালের, পরেরটা ২০১৬ সালের। সত্যি দুটি ছবি ফেসবুকে খুব আলোড়ন তোলে’, বলেন এই প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্রী। পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে বন্দি করেছেন ফিরোজ। তবে তার চোখে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম চূড়াকে ক্যামেরাবন্দি করা বা দেখার জন্য সেরা জায়গা তেঁতুলিয়াই। 

এবার বরং ফিরোজের নিজের কাঞ্চনজঙ্ঘায় মজে যাওয়ার গল্পটা বরং শুনি। তখন কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবার সেই পুরোনো ভ্যাসপা মোটরসাইকেলের পেছনের সিটেই যেন তার ছোট্ট জগৎ। শান্ত, সবুজে ঢাকা বোদা থেকে বাবা-ছেলে ছুটে চলেছেন আটোয়ারির শোল্টহরীর দিকে, নিজেদের ধানের জমি দেখতে। ধান পাকার মৌসুমে এই যাত্রা ছিল ফিরোজের কাছে উৎসবের মতো। ধানের গন্ধ, কুয়াশা ভেজা হাওয়া আর বাবার সঙ্গ; যেন এক অন্য রকম অভিযানে যাওয়া।

কিন্তু সেদিনকার দৃশ্য বদলে দিল ফিরোজের জীবন। ধানক্ষেতের ওপাশে চোখ রেখে ছিলেন তিনি। হঠাৎ যেন দূর আকাশের শরীরে ভেসে উঠল এক অপার্থিব দৃশ্য, শুভ্র বরফে ঢাকা, নরম সূর্যের আলোয় রূপকথার মতো ঝলমল করতে থাকা এক বিশাল পাহাড়! প্রথমে মনে হয়েছিল মেঘের খেলা। তারপর বুঝলেন, এ যে সত্যি! সেটাই ছিল মহিমাময় কাঞ্চনজঙ্ঘা, পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শিখর। সেদিন সেই খুদে ফিরোজের মনে জন্ম নিল অসীম বিস্ময়, এক দুর্বার টান-পাহাড়ের টান। বলা যায়, শান্তিহরীর সেই ছোট্ট ধানক্ষেতে দাঁড়িয়েই এক বালকের হৃদয়ে গেঁথে গেল পর্বতের প্রেম; কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই প্রথম দেখা তার জীবনের মানচিত্রই বদলে দিল।

‘জীবনে প্রথম পাহাড় দেখলাম। তাও বরফের টুপি পরা। কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। এখনো যেন দেখতে পাচ্ছি ওই দৃশ্য। বাবা আমাকে চেনালেন ওই পাহাড়টির নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। আরো বললেন হিমালয়ের কথা। সেই শুরু। পঞ্চগড় থেকে প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলে ফেললাম হাই স্কুলে পড়ার সময়, সেটা ২০০৭ সালে’, বললেন ফিরোজ।


সম্প্রতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে আয়োজন করা হয় ‘অপরূপা পঞ্চগড়’ নামের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে তোলা ফিরোজের ২৫টি ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। 

ও আরেকটা কথা, এই আলোকচিত্রীর মতে পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো দেখা যায় নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কাজেই পাঠক পর্বতচূড়াটিকে দেখার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। বাকিটা আপনার বিবেচনা!

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫