Logo
×

Follow Us

ফিচার

‘ডুমস্ক্রলিং’ ফাঁদে আটকে থাকা মন

Icon

মনিরা তাবাস্‌সুম

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৬

‘ডুমস্ক্রলিং’ ফাঁদে আটকে থাকা মন

প্রতীকী ছবি

রাত গড়িয়েছে অনেক, চারপাশ নিস্তব্ধ। অথচ হাতে ধরা মোবাইলের পর্দায় আলো ঝলমল করছে। একের পর এক খবর কোথাও যুদ্ধ, কোথাও দুর্ঘটনা, আবার কোথাও রাজনৈতিক সংঘাত। ‘আরেকটু দেখি, হয়তো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিস হয়ে যাবে’-এই ভেবে চোখ ক্লান্ত হলেও আঙুল থেমে নেই। সময় কেটে যায়, অন্ধকার রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটে। এ যেন এক অদৃশ্য আশক্তি। আর এই অভ্যাসের নামই হলো ‘ডুমস্ক্রলিং’। শব্দটা নতুন হলেও অভ্যাসটা অনেকের মধ্যেই আছে। মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নেতিবাচক খবর স্ক্রল করা, এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যেখান থেকে বের হওয়া ক্রমে কঠিন হয়ে ওঠে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় হঠাৎ করেই ‘ডুমস্ক্রলিং’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়। প্রতিদিন মৃত্যু, সংক্রমণ আর আতঙ্কের খবরে মানুষ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। গবেষণা বলছে, মহামারির সময় অনেক মানুষ ঘুমের সমস্যা, অবসাদ ও উদ্বেগে আক্রান্ত হয়েছিল শুধু এ অভ্যাসের কারণে।

কেন ঘটে : মানুষ স্বাভাবিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বা নেতিবাচক তথ্যের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন ঘবমধঃরাব ইরধং বা নেতিবাচক ঝোঁক। এতে মনে হয়, নিজেকে বাঁচাতে আর সচেতন থাকতে খারাপ খবর জানাটা জরুরি। এর সঙ্গে যোগ হয় সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম যা আমাদের পছন্দ বা ক্লিক দেখে আরো এমন খবর সামনে আনে। ফলে অজান্তেই এক অদৃশ্য চক্রে আটকে যাই নিজেরা।

ঢাকার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত হোসেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে পড়াশোনায় মনোযোগ কমে গিয়েছিল তার। নিশাত বলেন, ‘আমি রাত ২-৩টা পর্যন্ত নিউজফিড স্ক্রল করতাম। রাজনীতি, দুর্ঘটনা, করোনা মহামারির সব খবর পড়তে ইচ্ছা হতো। কিন্তু সকালে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতাম না। একসময় বুঝলাম, আমি আসলে নিজের মনের ক্ষতি করছি।’ পরে তিনি ফোনে স্ক্রিন টাইম লিমিট সেট করে এ অভ্যাস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন।

প্রভাব : মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ডুমস্ক্রলিং’-এর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, মস্তিষ্ক অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল নিঃসরণ করে, মনোযোগ ও কাজের দক্ষতা কমে যায়, দীর্ঘ মেয়াদে ডিপ্রেশন ও উদ্বেগের ঝুঁকি বাড়ে। আমরা এখন তথ্যের রাজ্যে বসবাস করছি। কিন্তু তথ্যের স্রোতে ভেসে যাওয়া মানেই সুস্থ থাকা নয়। মানুষ যত বেশি নেতিবাচক খবরের মধ্যে থাকবে, তত বেশি মানসিক অস্থিরতায় ভুগবে।

কীভাবে বের হওয়া যাবে : বিশেষজ্ঞরা ‘ডুমস্ক্রলিং’ থেকে বের হতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন- 

স্ক্রিন টাইম লিমিট সেট করা, ফোনে নির্দিষ্ট সময়ের পর সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

পজিটিভ কনটেন্ট বেছে নেওয়া-ভালো খবর, গল্প, অনুপ্রেরণাদায়ক কনটেন্ট পড়া।

ডিজিটাল ডিটক্স-সপ্তাহে অন্তত এক দিন বা দিনের কিছু ঘণ্টা ফোন-কম্পিউটার ছাড়া থাকা।

বিকল্প অভ্যাস গড়া-বই পড়া, হাঁটা, বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি আড্ডা ইত্যাদি।

অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছে না, কতটা সময় নষ্ট হচ্ছে শুধু স্ক্রল করতে করতে। অথচ প্রতিটি স্ক্রল মস্তিষ্কে অজান্তেই চাপ ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে জীবন থেকে হারিয়ে যায় স্বাভাবিক আনন্দ, বেড়ে যায় অকারণ দুশ্চিন্তা। তাই এখনই দরকার থামতে শেখা। সব খবর জানা জরুরি নয়, বরং যা দরকার তা-ই জানা জরুরি। তাই খবর নয়, নিজের মনকেই বেশি সময় দিন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫