Logo
×

Follow Us

ফিচার

প্রকৃতির সঙ্গে গ্রাউন্ডিং

Icon

মনিরা তাবাস্‌সুম

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৮

প্রকৃতির সঙ্গে গ্রাউন্ডিং

বিদ্যুতের জগতে ‘গ্রাউন্ডিং’ মানে হলো নিরাপত্তা, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটির সঙ্গে যুক্ত করে যন্ত্রপাতি ও মানুষকে সুরক্ষিত রাখা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, মানুষের জীবনেও আছে এমন এক ধরনের গ্রাউন্ডিং-যেটিকে বলে প্রকৃতির সঙ্গে গ্রাউন্ডিং। খালি পায়ে মাটির সংস্পর্শে হাঁটা, নদীর ধারে বসা বা ঘাসের উপর বসে কয়েক মিনিট ধ্যান-এসবই হলো গ্রাউন্ডিং। যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করে শরীরের ক্লান্তি, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর করা যায়। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তির অতিরিক্ত প্রভাব থেকে মুক্তি খুঁজতে, প্রকৃতির এ সরল, কিন্তু শক্তিশালী উপায়ে মানুষ আবার নিজের ভেতরের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারে।

স্বাস্থ্যগত দিক  

প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ শরীরকে নানাভাবে উপকৃত করে। মাটিতে রয়েছে এক ধরনের নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন, যখন আমরা খালি পায়ে মাটিতে দাঁড়াই তখন তা শরীরে প্রবেশ করে। এতে শরীরের অতিরিক্ত পজিটিভ চার্জ মাটিতে চলে যায়। ফলে শরীরের ভেতরে তৈরি হওয়া ইনফ্ল্যামেশন কমে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, আর ঘুমও হয় ভালো।

ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক দেখিয়েছেন, প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে থাকলে তা স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে আনে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস কিংবা হাইপারটেনশনের ঝুঁকি কমে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে খালি পায়ে সকালে ঘাসে হাঁটা, নদী, সমুদ্র বা পুকুরে গোসল করা, বাগানে কাজ করা, গাছের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা ভোরের আলোয় বা সন্ধ্যায় খোলা আকাশের নিচে ধ্যান করা, কয়েক মিনিট প্রকৃতির শব্দ শুনে চুপচাপ বসে থাকার মধ্য দিয়েই প্রকৃতির সঙ্গে গ্রাউন্ডিং করা যায় সহজেই।

মানসিক ভারসাম্য

শহরের কংক্রিটে বন্দি জীবনে যতই ব্যস্ত হই না কেন, প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে গাছের ছায়ায় বসা, বৃষ্টির শব্দ শোনা বা ভোরের রোদে হাঁটাহাঁটি-এসব আমাদের মস্তিষ্ককে ‘রিসেট’ করে দেয়। কর্মচাঞ্চল্য তৈরি করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়মিত প্রকৃতির গ্রাউন্ডিং ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ কমাতেও সমান কার্যকর। কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্র শান্ত করে, মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ ও ‘ডোপামিন’ নামে সুখী হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়।

আধ্যাত্মিক দিক

শুধু স্বাস্থ্য নয়, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতেও গ্রাউন্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক যোগ-ধ্যান অনুশীলনকারীরা বলেন, পৃথিবীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করলে আত্মা শান্ত হয়, মনোসংযোগ বাড়ে এবং জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। ধ্যানে বসার সময় মাটির ওপর বসা বা নদীর ধারে নির্জনে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, বরং ভেতরে এক ধরনের শক্তি জাগিয়ে তোলে। আধ্যাত্মিক চিন্তায় বিশ্বাস করা হয়, পৃথিবী হলো আমাদের ‘মাতৃশক্তি’। তার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ মানে হলো নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে মাটির কাছে সমর্পণ করা, আর শান্তি ও স্থিতি ফিরে পাওয়া।

আধুনিক জীবনে আমরা যতই প্রযুক্তিনির্ভর হই না কেন, আমাদের শরীর ও মন প্রকৃতির কাছেই সবচেয়ে নিরাপদ। প্রকৃতির সঙ্গে গ্রাউন্ডিং তাই মানুষের শরীরকে নিরাময় করার উপায়, মনকে প্রশান্ত করার পথ আর আত্মাকে ভারসাম্যে ফেরানোর এক চাবিকাঠি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫