Logo
×

Follow Us

ফিচার

রেজিন জুয়েলারি দিয়ে নতুন স্বপ্ন

Icon

এইচ আলিম

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৮

রেজিন জুয়েলারি দিয়ে নতুন স্বপ্ন

রেজিন জুয়েলারি দিয়ে আর্থিকভাবে এগিয়ে যেতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বগুড়ার নারী উদ্যোক্তারা। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া নারীরা রেজিন জুয়েলারি শিল্পকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকেই রেজিনশিল্পে সিদ্ধহস্ত হয়ে আয় করে নিজের খরচ নিজেই মিটিয়ে নিচ্ছেন। দেশে রেজিনের প্রচলন থাকলেও রেজিন জুয়েলারির তেমন প্রচলন নেই। অথচ এই শিল্পকে ধারণ করে জুয়েলারি পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে নারী উদ্যোক্তারা। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধশত নারী উদ্যোক্তারা। 

জানা যায়, ২০২০ সালে দেশে করোনাকালে অনলাইন মাধ্যমকে ঘিরে অনেকেই নতুন নতুন উদ্যোক্তা হয়ে যান। নানান কিছু নিয়ে ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করেন। বগুড়ায়ও সেই ঢেউ লাগে-কেউ খাবারের, কেউ হস্তশিল্প, বৃক্ষের চারা, তৈজসপত্র, পোশাক, হ্যান্ডিক্র্যাফট, বাঁশশিল্প, মাটি শিল্পসহ বিভিন্ন কিছু নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। নানা মেলা আর পার্বণে এই উদ্যোক্তাদের চোখে পড়ার মতো দৃশ্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটলে কিছু কিছু উদ্যোক্তা অনলাইন মাধ্যমে বিজনেসে সফলতা পাননি। অসংখ্যজনের একই ধরনের ব্যবসার কারণে অনেকে পিছিয়ে পড়েন। সফলতা না পাওয়ায় কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

ঘুরে দাঁড়ানো এসব নারী উদ্যোক্তাদের স্বল্প মূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে রেজিন জুয়েলারিতে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বগুড়ার বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা। রেজিন ব্যবহার করে বিভিন্ন জুয়েলারি তৈরির নিয়ম ও বিপণন নিয়ে কাজ করছেন নারীরা। শুধু জুয়েলারিই নয়, ওয়াল শো পিস, টেবিল শো পিস, ঘরের বিভিন্ন শো পিস, বিয়ে, জন্মদিনের স্মৃতি ধরে রাখতেও নানা ডিজাইনের শো পিস তৈরি করছে। 

রেজিন নিয়ে বগুড়ায় কাজ করা অন্যতম নারী হলেন বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকার বাসিন্দা মোস্তারি মেহজাবিন মীম। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়েছেন। পেশাজীবী স্থাপত্য প্রকৌশলীর পাশাপাশি তিনি রেজিন নিয়ে কাজ করেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম আর্নস্ট। তিনি স্বল্প মূল্যে নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের আর্থিকভাবে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

বগুড়ার রেজিন জুয়েলারির নারী কর্মীরা বলছেন, রেজিন দেখতে মূলত স্বচ্ছ কাচের মতো। কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকায় পানিতে অদ্রবণীয় জৈব মিশ্রণ। রেজিন এক ধরনের আঠা বা বার্নিশের  মতো কাজ করে। তরল রেজিন বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে সে পণ্যের ছাঁচে ফেলে রেখে তা জমাট করতে হয়। জমাটের সময় বিভিন্ন ডিজাইন  মতো ফুল বা নকশাও দিতে হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা জমাটের পর সেটি কাচের মতো মসৃণ হয়। সেটিকে একটু ঘষেমেঝে বিভিন্ন জুয়েলারি বা প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করতে হয়। এ জন্য প্রায় তিন থেকে চার দিন সময় লেগে যায়। সিলিকন মল্ড বা পণ্যের ছাঁচ অনুযায়ী একসঙ্গে অসংখ্য পণ্য তৈরি সম্ভব। তরল রেজিন ব্যবহার করে শুকনো ফুল, রং বা নানা কিছু মিশিয়ে নকশা করা যায়, যা দিয়ে পরে গয়না, ঘর সাজানোর তৈজসপত্র, ঘড়ি, ওয়ালম্যাট, আংটি, চুড়ি, বেসলাইটসহ নানা কিছু তৈরি করা যায়। এসব পণ্য বিভিন্ন শোরুমে, জুয়েলারির দোকানে, মেলা, উৎসবে কেনাবেচা চলছে। আর নারী উদ্যোক্তারা অনলাইন পেজ খুলে কেনাবেচা করে যাচ্ছেন।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পড়ুয়া ফারিয়া রহমান জানান, তিনি রেজিনের কাজ শিখেছেন। কিন্তু আরো ভালো করে শেখার জন্য তিনি প্রশিক্ষণ নেন। তিনি প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। তার অনলাইন পেজের মাধ্যমে ঢাকা, বগুড়া, সিলেট, নারায়ণগঞ্জের ক্রেতারা এই পণ্য কেনাকাটা করেন। একটি মানসম্মত রেজিনের আংটি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ডিজাইন ও মান অনুযায়ী একটি বেসলেট ২০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই পরিমাণ বিক্রির পর তিনি প্রতি মাসে আয় করেন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। ফারিয়ার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তার বোন ফারহানা রহমান। প্রতি মাসে যা আয় করেন তাতে তাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে পারছেন।

শখ শৌখিন পেজের প্রধান কর্তা সুহাদা জামান মীম জানান, তিনি রেজিনের কাজটি শিখেছেন। এখন তিনি জুয়েলারি পণ্য তৈরি করছেন এবং বিক্রি শুরু করবেন। এটি নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। চাহিদাও আছে। অনেক নারীই রেজিনের জুয়েলারি পছন্দ করেন। বগুড়ায় এটা নিয়ে তেমন একটা কাজ হয়নি। কিন্তু এখন শুরুতেই বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেক নারী খোঁজ করে জুয়েলারি পণ্য সংগ্রহ করছেন। অনেকেই আবার তাদের বিয়ের সময়কার ফুলের মালা, প্রথম পাওয়া ফুল, সেটি স্মৃতি করে রাখতে অর্ডার দিয়ে কাজ করে নিচ্ছেন।

বগুড়ার সারা বুটিক হাউসের জুয়েলারি শাখার প্রধান কর্তা এলিনা জাহান দিপু জানান, শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিজীবনে না প্রবেশ করে তিনি উদ্যোক্তা হন। নারীদের বিভিন্ন ডিজাইনের গয়না তৈরি করে বিক্রি করতেন। ইদানীং রেজিনের গয়নার চাহিদা সৃষ্টি হলে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নিজের হাতে পণ্য তৈরির পর সেটি যখন অন্য কোনো নারী পরে শোভা বৃদ্ধি করেন তখন তার বেশ ভালো লাগে। রেজিনের জুয়েলারির সঙ্গে ওয়াল শো পিসও তৈরি করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা আছেন যারা নিজেদের পছন্দমতো পণ্য কিনছেন। 

আর্নস্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোস্তারি মেহজাবিন মীম জানান, নারীদের আর্থিকভাবে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবেন নারীরা। নিজের আয় দিয়ে নিজের পরিবার যেন পরিচালনা করতে পারেন। নিজের লেখাপড়ার খরচ বা পরিবারের জন্য চাহিদা মেটানোর মতো আর্থিক আয়মূলক কাজ করতে পারেন। রেজিন জুয়েলারি নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। যার কাজে যতটা ফিনিশিং আছে তার কাজের চাহিদা তত। ভালো করতে পারলে এই শিল্প দিয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব। এতে করে নারী উদ্যোক্তারা বেশ উপকৃত হবে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫