
শীতের শাকসবজি ও ফলমূল।
শীতকালে নতুন নতুন মৌসুমি শাক-সবজির নানা পদ থাকে খাবার টেবিলে। যে কোনো সময়ের খাদ্য তালিকায় দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একটি হলো বাজারে কী কী পাওয়া যায়, অন্যটি এই সময়ে কোন ধরনের খাবার খাওয়া জরুরি।
পানি ও তরল
শীতে প্রথমেই রুক্ষ ও শুষ্কতার বিষয়টি আসে। এ সময় শরীরে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। সুস্থ ব্যক্তির সারা দিনে কমপক্ষে আড়াই লিটার বা ১০ গ্লাস পানি পান জরুরি। যেহেতু এ সময় পানির তৃষ্ণা কম পায়, তাই খাদ্য তালিকায় জুস, স্মুদি বা স্যুপের মতো তরল খাবার রাখুন। দিনের প্রথম ভাগে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করে ফেললে মেটাবলিজম ভালো হবে।
সবুজ শাকসবজি
শীতে প্রতিদিনের খাবারে সবুজ পাতার সবজি রাখুন। এতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘কে’ থাকে। এ ছাড়া হালকা হলুদ ও ফ্যাকাসে সবুজ পাতা বা শাকে প্রচুর ফলেট থাকে, যা গর্ভবতী মা এবং বাড়ন্ত শিশুদের জন্য খুব ভালো।
রান্নার সময় চেষ্টা করতে হবে যেন সবজির রং নষ্ট না হয়। এই সবুজ রঙের সবজির মধ্যে আছে পুঁইশাক, বাঁধাকপি, পাটশাক, পালংশাক ইত্যাদি। সবুজ সবজির পাশাপাশি খাবারে রাখুন গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বিট ইত্যাদি রঙিন সবজি। এতে ভিটামিন ‘এ’, পটাসিয়াম ও ক্যারোটিনয়েড আছে। ক্যারোটিনয়েড কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া চোখের জন্যও এ ধরনের সবজি খুবই ভালো।
এসব রঙিন সবজি ত্বকের মসৃণতা বাড়ায়, শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। শীতের খাদ্য তালিকায় আরো থাকতে পারে ফুলকপি, মুলা, শালগম ইত্যাদির মতো সাদা সবজি। খাবারে সবজির পরিমাণ বাড়িয়ে চিনি ও ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। চিনি ও সবজি দুটো থেকেই আমাদের শরীর শর্করা পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কর্মস্পৃহা কমিয়ে শরীরে অবসাদ জোগায়।
স্নেহজাতীয় খাবার
শীতে শরীরে তাপ উৎপন্নের জন্য প্রচুর ক্যালরি বার্ন হয়। তাই এ সময় স্নেহজাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি। এ জন্য বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল যেমন অলিভঅয়েল, সরিষার তেল, আমন্ড অয়েল রাখুন খাবারে। রান্নায় খাবার তেল কম ব্যবহার করে ভর্তা বা সালাদে কাঁচা তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
মাছ
শীতকালে আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দুই বেলা মাছ খান। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ রাখুন খাবারে। সপ্তাহে এক দিন মুরগির মাংস থাকতে পারে। তবে কম মসলায় রান্না করা নিরাপদ।
মাংস
শীতকালে হালকা তেল-মসলার খাবার বা জলীয় খাবারের বদলে একটু ভারিক্কি খাবার খেলে ক্ষতি নেই। মসলা শরীরে তাপ উৎপন্ন করে, বিশেষ করে একটু ঝাল, আদা বা পেঁয়াজ ইত্যাদি। খাবারে একটু বেশি চর্বি তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। তাই মাছের বদলে মাংস বেছে নেওয়া যায় এ সময়। ভাজা-পোড়া খেলেও ক্ষতি নেই, তবে বুঝেশুনে।
স্যুপ ও ওটমিল
শীতের রাতের বেলায় সাধারণ ভাত-তরকারির বদলে, এক বাটি গরম স্যুপ ও সঙ্গে ওটমিল বা লাল চালের ভাত বেছে নেয়া ভালো। এগুলো তাপ যেমন বাড়ায় তেমনি অনেকক্ষণ ক্যালরির যোগান দেয়।
গরম পানি
শীতে একটু ভাজা-পোড়া বা ভারিক্কি খাবারের পর হালকা গরম পানি বা কোনো গরম পানীয় নিন, সেটা হজমে সাহায্য করে। কুসুম গরম পানি গলায় ঠান্ডা লাগানো থেকেও রক্ষা করে।