ঈদে যেভাবে সুস্থ ও ফিট থাকবেন

রমজানে সারামাস রোজা রাখার পরে ঈদের সময় সবার বাসায় কমবেশি ভারি খাবার রান্না হয়। রান্নার সময় বেশি চাপ পড়ে বাড়ির গৃহিণী এবং যারা রান্না করেন তাদের ওপর। কারণ পরিবারের একেকজনের পছন্দের খাবার একেক রকম। ঈদের আনন্দে সব খাবারই আমাদের খেতে ইচ্ছা করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পছন্দের খাবারের পাশাপাশি বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার। তেল-চর্বিযুক্ত খাবারের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে আগে থেকেই।


মাথায় রাখতে হবে, তেল-মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই যেন দুধজাতীয় খাবার, মিষ্টি আমরা বেশি না খেয়ে ফেলি। ঈদের দিন সকালবেলা সব বাড়িতেই মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এই রেওয়াজ যতদূর সম্ভব সীমিত রাখাই ভালো। যাদের ডায়াবেটিস আছে, ওজন বেশি কিংবা ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের মিষ্টি না খাওয়াই ভালো। তবে মিষ্টির বিকল্প হিসেবে দই খাওয়া যেতে পারে।


ঈদের সময় খাদ্য তালিকায় প্রচুর তেল, চর্বি, মসলার সমন্বয়ে তৈরি খাবারের পাশাপাশি যেন কিছু হালকা ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও থাকে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। যেমন নানারকম ফলের তৈরি ফ্রট সালাদ, কাস্টার্ড, হাড়ছাড়া মুরগির মাংস ও নানারকম সবজি রান্না। ঈদের দিন তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি ও আমিষজাতীয় খাবার, যেমন- মুরগি, খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি খাওয়া হয়। চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মতো টক খাবারও। এসব খাবার পরিমাণ বুঝে খাবেন।


ঈদে বিভিন্ন রেসিপি তৈরিতে খাদ্য উপাদান ব্যবহারে একটু সতর্ক হলে অনেক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করা যায়। যেমন- খাবার তৈরিতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করা। ঘি বা মাখনের ব্যবহার কম করা যেতে পারে। কনডেন্সড মিল্কের পরিবর্তে লো ফ্যাট দুধ ব্যবহার করাই শ্রেয়। একটু স্বাস্থ্য চিন্তা মাথায় রেখে সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করে ভিন্নধর্মী রেসিপি আপনার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেবে। খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই ব্যায়াম করবেন।


ঈদে যেসব খাবার রাখবেন

১. লাচ্ছি: লাচ্ছি দই দিয়ে তৈরি হওয়ায় দইয়ে থাকে প্রো-বায়োটিক যা পাকস্থলীর ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে পাকস্থলীকে ঠান্ডা রাখে এবং শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করার পাশাপাশি খাবার হজমে সাহায্য করে।

২. মিক্সড সবজি: খাবারের মেন্যুতে প্লেটের অর্ধেক পরিমাণ মিক্সড সবজি রাখবেন। এতে উচ্চ খাদ্যআঁশ থাকার জন্য অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে।

৩. সালাদ: যে কোনো প্রকারের সালাদ শরীরের জন্য উপকারী। একেক প্রকারের সালাদে থাকা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ ডি ই কে দেহে শোষণের জন্য তেলের উৎস হিসেবে অলিভ অয়েল অথবা সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।


৪. মাছ: অতিরিক্ত মাত্রায় মাংস এবং ভারি খাবার খাওয়ার পর অনেকসময় একঘেয়েমি চলে আসে। তাই একবেলা মাংস খেলেও আরেকবেলায় মাছ রাখুন। মাছ মাংসের চেয়ে উপকারী। মাছ সহজেই হজমে সাহায্য করে এবং এতে ভিটামিন ই ও বায়োটিন থাকার কারণে স্কিন সুন্দর রাখে ও চুলের জন্য উপকারী।

৫. পেঁপে ভর্তা: অনেকসময় ভারি খাবার অনবরত খাওয়ার ফলে একঘেয়েমি চলে আসে এবং হজমে সমস্যা হয়। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য পেঁপে ভর্তা খাবারের লিস্টে রাখবেন।


খাবার খাওয়ার নিয়মাবলি

১. ভারি খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ২০-২৫ মিনিট আগে ২ গ্লাস পানি পান করবেন। এবং খাবার শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর পানি পান করবেন। এতে করে খাবার দ্রুত হজম হবে।

২. খাবার শুরু করার পর থেকে শেষ করার আগ পর্যন্ত পানি পান করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ ভারি খাবার খাওয়ার মাঝে পানি পান করলে খাবার সহজে হজম হয় না।


৩. খাবার খাওয়ার আগে সালাদ খাবেন। সালাদে খাদ্যআঁশ থাকায় পেট ভরা থাকে এবং চাইলেও অতিরিক্ত ভারি খাবার খাওয়া যায় না।

৪. যে কোন খাবার হাতের বদলে চামচ দিয়ে খাবেন এবং ধীরে ধীরে খাবেন।

৫. এ সময় অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত ভারি খাবার, অতিরিক্ত মাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।


৬. যেদিন যতটুকু অতিরিক্ত খাবার খাবেন সেদিন হাঁটার মাধ্যমে অথবা ব্যায়াম করার মাধ্যমে ক্যালরি বার্ন করবেন। এতে বেশি খেলেও ওজন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবেন।


লেখক: পুষ্টিবিদ, ফরাজী হাসপাতাল লিমিটেড

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //