
রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চার গোল করা ভ্যালেন্তিন কাস্তেইয়ানোস। ছবি: টুইটার
লা লিগার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন এবং সফলতম দল রিয়াল মাদ্রিদ ৪-২ গোলে বিধ্বস্ত হলো জিরোনার কাছে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ভ্যালেন্তিন কাস্তেইয়ানোসের কাছে। চারটি গোলের সবগুলোই যে করেছেন এ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ম্যাচটি যারা নিজ চোখে দেখেছেন, বিশ্বাস করাটা তাদের জন্যও বেশ কঠিন। তবে মেনে নেওয়াই যায়। ম্যাচটিকে বর্ণনা করতে এক শব্দে বলাই যায়, অঘটন; মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) যার মঞ্চায়ন হলো মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে।
ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ আত্মবিশ্বাসীই ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। পুরো ম্যাচজুড়ে তাই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। যা উঠে এসেছে ম্যাচের পুরো বিবরণেও। রিয়ালের ৭১% বল দখলের বিপরীতে মাত্র ২৯% সময় বল কাছে রাখতে পেরেছে জিরোনা। যদিও স্কোরলাইন দেখে সেটি বোঝার উপায় নেই। দুই দলের মধ্যে মূলত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সুযোগ কাজে লাগানোটাই। রিয়াল যেখানে গোলের জন্য ১৮টি শট নিয়ে মাত্র তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে, সেখানে জিরোনার নেওয়া শটসংখ্যা ১৩ হলেও চারটিই ছিল সফল।
প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। লুকা মডরিচের নিচু ক্রসে ব্যাকহিল ফ্লিক করেছিলেন রদ্রিগো গোয়েস। তবে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের ব্যাকহিল ফ্লিক ঠেকিয়ে দেন জিরোনার এক ডিফেন্ডার।
গোছানো এক আক্রমণ থেকে ১২ মিনিটে রিয়ালের জালে ম্যাচের প্রথমবারের মতো বল জড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করেন কাস্তেইয়ানোস। বাঁ প্রান্ত থেকে সতীর্থের ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখে হেড থেকে রিয়ালের জালে বল জড়ান অরক্ষিত আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কাস্তেইয়ানোস।
ঠিক ১২ মিনিট পর আবারও কাস্তেইয়ানোসের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। নিজেদের অর্ধ থেকে আরনাউ মার্টিনেসের উঁচু করে বাড়ানো বল ধরে সঙ্গে লেগে থাকা এডের মিলিটাওকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন কাস্তেইয়ানোস। এরপর ডান পায়ের শটে এদিন রিয়ালের গোলবার সামলাতে নামা আন্দ্রে লুনিনকে ফাঁকি দেন তিনি।
৩৪ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলে ব্যবধান কমায় রিয়াল মাদ্রিদ। ডান প্রান্ত থেকে মার্কো অ্যাসেন্সিওর ক্রসে মাথা ছুঁয়ে গোলের ঠিকানা খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। ফলে জিরোনার বিপক্ষে ১-২ গোলে পিছিয়ে থেকে মধ্যবিরতিতে যায় লস ব্লাঙ্কোসরা। দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল আরও দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরে আসবে বলেই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতে না হতেই আবারও রিয়ালের গোলবারে কাস্তেইয়ানোস গোলার আক্রমণ। মধ্যবিরতির পর পুনরায় খেলা শুরুর ৪৫ সেকেন্ডের মাথায় ডান দিক থেকে সতীর্থের পাস থেকে নিঁখুত শটে হ্যাটট্রিক করেন কাস্তেইয়ানোস। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে হজম করা এ ধাক্কা থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি রিয়াল।
উল্টো ৬২ মিনিটে হেড থেকে নিজের চতুর্থ গোল করেন কাস্তেইয়ানোস। মিনিট দশেক পরে এ আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে জিরোনা কোচ তুলে না নিলে তার তাণ্ডব থামতো নাকি বলা মুশকিল। ৮৫ মিনিটে ভিনিসিয়াসের কাটব্যাক থেকে কিছুক্ষণ আগে বদলি হিসেবে নামা লুকাস ভাসকেজ গোল করলেও এটি শুধু হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে।
খেলার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা অপটার তথ্য অনুযায়ী, একবিংশ শতাব্দীতে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চার গোল করেছেন কাস্তেইয়ানোস। রিয়ালের বিপক্ষে করা চার গোলের মাধ্যমে কাস্তেইয়ানোস অনেকগুলো কীর্তির জন্ম দিয়েছেন। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দশম ফুটবলার হিসেবে হিসেবে রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে চার গোল করার কীর্তি গড়েছেন ২৪ বছর বয়সী এ আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। কাস্তেইয়ানোসের আগে ২০১৩ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ কীর্তি গড়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি।
ফুটবল ইতিহাসের ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চার গোল করেছেন কাস্তেইয়ানোস। ২০২০ সালের নভেম্বরে ভালেন্সিয়ার হয়ে কার্লোস সলেরের পর এ প্রথম কোনো খেলোয়াড় লা লিগায় রিয়ালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করলেন। কাস্তেইয়ানোসের আগে ২০১৪ সালে সর্বশেষ আর্জেন্টাইন হিসেবে লা লিগায় লস ব্লাঙ্কোসদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন লিওনেল মেসি। এর আগে সবশেষ যে হ্যাটট্রিক করেছিলেন কাস্তেইয়ানোস, সেখানেও তিনি করেছিলেন চার গোল; গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে নিউ ইয়র্ক সিটির হয়ে রিয়াল সল্ট লেকের বিপক্ষে।
জিরোনার কাছে হেরে রিয়াল মাদ্রিদের লা লিগা শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল। ৩১ ম্যাচ শেষে কার্লো অ্যানচেলত্তির শিষ্যরা ৬৫ পয়েন্টেই আটকে রইল। এক ম্যাচ কম খেলে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বার্সেলোনা।