
বসুন্ধরা কিংস। ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপের লিগগুলো দুনিয়া জোড়া বিখ্যাত কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ হোক কিংবা স্প্যানিশ লা লিগা, কোন দল শিরোপা জিতবে-শুরু থেকে আঁচ করা মুশকিল। ২০১১-১২ থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত ইতালিয়ান লিগে টানা ৯ বার শিরোপা জিতেছে জুভেন্টাস। জার্মান বুন্দেস লিগায় ২০১২-১৩ মৌসুম থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত টানা ১১ বার লিগ শিরোপা জয় করে থেমেছে বায়ার্ন মিউনিখ। তেমনি পিএসজি বিগত এক যুগে ১০ বার জিতেছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। রিয়াল মাদ্রিদেরও ১৯৬০-৬১ থেকে টানা পাঁচটি লা লিগা জয়ের রেকর্ড রয়েছে।
বাংলাদেশেও বসুন্ধরা কিংস কি একই পথে হাঁটছে? দলটির প্রিমিয়ার লিগ অভিষেক ২০১৮-১৯ মৌসুমে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে তারা জয় করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের টানা পঞ্চম শিরোপা; যা দেশের সর্বকালের রেকর্ড।
পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৪৮ সালে শুরু হয় ঢাকা লিগ ফুটবল। প্রথম আসরে শিরোপা জয় করে ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। স্বাধীনতার পূর্বে সর্বোচ্চ সাতটি করে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ জয়ের রেকর্ড রয়েছে দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং আর ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ১৯৫৩-৫৬ পর্যন্ত টানা চারটি লিগ শিরোপা জয়ে গড়ে অনন্য রেকর্ড; যা বহু বছর ছিল অক্ষত। সম্প্রতি বসুন্ধরা কিংস ভেঙে দিল। ১৯৫৫ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগ বন্যার জন্য মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। তবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকায় ওয়ান্ডারার্সকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৮৩-৮৫ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ে ঢাকা আবাহনী স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নজির গড়ে। ১৯৮৬ থেকে টানা তিন মৌসুম ঢাকা মোহামেডান ‘অপরাজিত লিগ’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০০৭ সাল থেকে পেশাদার ফুটবল চালুর প্রত্যাশায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আয়োজন করছে প্রিমিয়ার লিগ। পেশাদার লিগের প্রথম তিনটি আসরেই বাজিমাত করে ঢাকা আবাহনী। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল আসরে দুই ধাপে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের একমাত্র নজির গড়ে রেখেছে আকাশি-হলুদ শিবির।
২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংসের আগমনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। টানা পাঁচ লিগ শিরোপায় বসুন্ধরা আক্ষরিক অর্থেই দেশের ফুটবলের ‘কিং’। ফুটবলে সাফল্য পেতে আর্থিক সামর্থ্যরে কোনো বিকল্প নেই; যা বসুন্ধরা কিংসের রয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপের মালিকানাধীন ক্লাবটি শুরু থেকেই দেদার অর্থ খরচে সেরা দল গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় কিংস শিবিরে। বর্তমান সময়ের সেরাদের মধ্যে রাকিব হাসান, শেখ মোরসালিন, আনিসুর রহমান জিকো, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, সোহেল রানা-সবাই কিংস ডেরায়। রবসন রবিনহো, ডরিয়েল্টন গোমেজ, মিগুয়েল ফেরেরার মতো বিদেশি পারফর্মাররা মাঠ মাতাচ্ছেন। চলতি বিপিএলে ১৫ ম্যাচে ১৩ গোল করে ডরিয়েল্টন গোমেজ যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতের সঙ্গে। নতুন রেকর্ড গড়েছেন কোচ অস্কার ব্রুজেনও। বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে কোনো কোচ টানা পাঁচটি লিগ শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি।
দেশের ফুটবলে সাফল্য পেলেও বসুন্ধরা এশিয়ার সেরা এএফসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে ব্যর্থ। চলতি বছরেই এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের প্লে-অফ পর্ব থেকে ছিটকে যায় তারা। কখনো পেরোতে পারেনি এএফসি ক্লাব কাপের গ্রুপপর্বের বাধা। ২০২৪-২৫ মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস নিশ্চিত করতে চাইবে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের প্লে-অফ বাধা পেরোতে। নিদেনপক্ষে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সেমিফাইনাল তো খেলাই উচিত; যা বাংলাদেশের ফুটবল উত্থানে জরুরি।